নিজের জন্মদিনে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Published : 25 Jan 2016, 06:22 PM
গত এক বছরে দেশে নতুন করে ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করায়’ মুহিতের এই ধন্যবাদ।
“আজকে আমার একটি বিশেষ দিন। এ দিন আমি খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গত এক বছর কোনো জ্বালাও-পোড়াও না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়েছে।”
২০১৪ সালের শুরুর তিন মাসের টানা অবরোধে ব্যাপক নাশকতার পর প্রায় এক বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকার প্রসঙ্গ টেনে মুহিত বলেন, “দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অর্থনৈতিক সূচকগুলোও ভালো। তাই অধরা ৭ শতাংশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবার ধরা দেবে বলে আশা করছি।”
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নিজের দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে জন্মদিন পালনের আয়োজনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মুহিত।
“মানুষ এখন উন্নয়ন চায়। আর সেই কাজটিই আমরা করছি,” বলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত এরইমধ্যে টানা সাত বছর বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণার রেকর্ড গড়েছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের শুভেচ্ছার জবাবে এ সরকারের আগামী তিনটি বাজেটও নির্বিঘ্নে দিয়ে যাওয়ার আশার কথা বলেন তিনি।
“শরীর ভালো থাকলে আরও তিনটা দিতে চাই। তাহলে সাইফুর রহমান সাহেবের ১২টার সমান হবে।”
জন্মদিনের কেক কেটে তৃপ্তির সঙ্গে মুহিত বলেন, “পৃথিবীতে আমিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি, যে ৮৩ বছর বয়সেও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে।”
১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। এরপর দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মুহিত পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ এই কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য কী- এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, “বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে দেখতে পাওয়া সবচেয়ে বড় সাফল্য। আশা করছি ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। তখন আরও ভালো লাগবে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, যা অনেক বড় দেশ পারেনি।
কোনো আক্ষেপ আছে কি না- জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু হেসে বলেন, “আমি তো খুঁজে পাই না।”
জন্মদিনে ফুরফুরে মেজাজে থাকা অর্থমন্ত্রী থমকে থাকা বিনিয়োগ নিয়েও আশার কথা বলেন।
“রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন না। এবার যেহেতু জ্বালাও-পোড়াও নেই, তাই বিনিয়োগ হবে। আমি এটা নিয়ে আগে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, বেসরকারি বিনিয়োগ যে একেবারেই আসছে না তা কিন্তু নয়। ধীরে ধীরে বাড়ছে।
“আমাদের বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক কোনো ঝামেলা হলেই তারা চুপ করে যায়। কোনো ধরনের বিনিয়োগ করে না। তবে এবার এসব নেই। তাই বিনিয়োগ নিয়ে আশা করাই যায়।”
সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আবারও বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুরে যমুনা নদীর বাঁ পাশ থেকে শুরু করে মংলা পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে নদী ড্রেজিং হবে। ড্রেজিংয়ে খরচ হবে ২ বিলিয়ন ডলার, আর রাস্তায় খরচ হবে ৪ বিলিয়ন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে চার বছর।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বাংলাদেশেও কমা উচিৎ মন্তব্য করে মুহিত বলেন, “আসলে তেলের দাম কমে এখন যেখানে নেমে এসেছে তাতে আমি মনে করি আমাদেরও কমানো উচিৎ। তবে আরও উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা এটা কমাতে হবে।”