কারখানায় যেতে দুর্ভোগ, ফিরতেও

নভেল করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে চালু হওয়া তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পড়তে হয়েছে নানা রকম দুর্ভোগে। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পরিবহন সঙ্কটের ভোগান্তি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোউত্তম সেনগুপ্তবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 April 2020, 04:06 PM
Updated : 5 April 2020, 04:10 PM

লকডাউনের মধ্যে রোববার বিকালে ইপিজেড মোড় থেকে অনেক শ্রমিককে পায়ে হেঁটে কিংবা ট্রাক ও রিকশা ভ্যানে করে বাসায় ফিরতে দেখা গেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। যা দুই দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।

৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার হলেও চট্টগ্রামের অনেক পোশাক কারখানা খুলেছে রোববার। চাকরি বাঁচাতে শ্রমিকদের অনেকে হেঁটে কর্মস্থলে যোগ দেন।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত পলাশ দাশ নামে একজন জানান, সকালে আলকরণের বাসা থেকে হেঁটে টাইগার পাস পৌঁছান। সেখান থেকে শেয়ারিং মোটর সাইকেলে করে ইপিজেড যান। 

বিকালে বাসায় ফিরতে ইপিজেড মোড়ে অবস্থান করা পলাশ বলেন, “১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কিভাবে বাসায় ফিরব তা বুঝতে পারছি না। কোন ট্রাকে করে যেতে না পারলে বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে রওনা করতে হবে।”

এদিকে ইপিজেড থেকে কোন যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে টাইগার পাসে বাসায় রওনা করা নাসরিন জাহান নামে এক পোশাক শ্রমিক বলেন, মাসের শুরু। এখনও বেতন পাইনি। সকালে ৮০ টাকা খরচ করে অফিসে গেছি। এখন তেমন কোন খরচের টাকা নেই। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি।

তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের জন্য অফিস থেকে নিজস্ব বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা যারা পরিশ্রম করে উৎপাদনের সাথে জড়িত তাদের কোন ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের অধিকাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আনা নেয়া করা হয় ভাড়া করা বাসে। গণ পরিবহন বন্ধ থাকায় অনেক মালিক সড়কে বাস নামায়নি।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায় কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, তাদের অফিসের নিজস্ব বাসে করে কর্মস্থলে আনা নেয়া করা হলেও শ্রমিকদের আনা নেয়া করা হয় ভাড়া করা বাসে।

তাদের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য ভাড়া করা সাতটি বাসের মধ্যে রোববার গেছে তিনটি বাস। অন্য চারটি রুটের শ্রমিকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মস্থলে গেছেন।

ইপিজেডের অধিকাংশ কারখানার অবস্থা প্রায় একই। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারখানার বাসে করওে আনা নেওয়া করা হলেও শ্রমিকদের জন্য কোন ব্যবস্থা ছিল না।  

এদিকে পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিকের উপস্থিতি অনেকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মনে করলেও তাদের অনেকে ক্ষোভের সুরে বলেন, “কাজে যোগ না দিলে চাকরি চলে যাবে। চাকরি না থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। না খেয়েও মরতে হবে আবার করোনায়ও মরতে হবে।” 

মো. সাদেক নামে একজন বলেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও যেতে নিষেধ করেছেন। বাসায় থেকে নামায পড়তে অনুরোধ করছেন। কিন্তু কারখানা খোলা রেখে কিভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একজন শ্রমিক বলেন, বিজিএমইএ’র অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে করোনাভাইরাসের দুর্যোগের মধ্যেও গার্মেন্টসের মতো বেশি জনসমাগমের মতো জায়গায় হাজার হাজার শ্রমিককে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর ফল ভয়াবহ হতে পারে। 

শ্রমিকদের অনেকে বলেন, তারা কষ্ট করে বাড়ি থেকে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন বেতনের আশায়। কিন্তু বেতনও পাননি।

রোববার কারখানা খোলার পর চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড এর পক্ষ থেকে সাতটি নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় প্রত্যেক কারখানা মালিককে।

সেখানে প্রত্যেক শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব সবার আগে দিতে বলা হয়েছে। একইসাথে প্রত্যেক শ্রমিককে সুরক্ষা পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস অত্যাবশ্যকীয়ভাবে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য যানবাহন সুবিধা এবং কারখানায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

খবর নিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকরা মুখে মাস্ক এবং অনেকক্ষেত্রে হ্যান্ড গ্লাভস দিলেও সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। দেয়া হয়নি যানবাহন সুবিধা।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (সিইপিজেড) মোট কারখানার সংখ্যা ১৫৮ এবং শ্রমিক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খোরশিদ আলম বলেন, “আমাদের ৬০ শতাংশের মতো কারখানা রোববার চালু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু আংশিক এবং কিছু পুরোপুরি কাজ চলছে।

“কারখানাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।  তারা যদি স্বাস্থ্য বিধি না মানলে বাই ফোর্স বন্ধ করে দেয়া হবে।” 

কর্ণফুলী ইপিজেডের জিএম মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ জানান, তাদের ৪২টি কারখানার মধ্যে ১৫টি কারখানা পুরোপুরি চালু হয়েছে। এগুলোতে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের হ্যান্ড গ্লাভস দেয়া হয়েছে, তারা মাস্ক পড়ে কাজ করছে। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহিত করার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষগুলোকে বলা হয়েছে। এছাড়া ইপিজেড কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুরো এলাকা জীবানুনাশক দিয়ে পরিচ্ছন্ন করছে।

এদিকে ইপিজেডের বাইরে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানাগুলোরে মধ্যে ত্রিশটি চালু ছিল বলে বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে।