গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কোনো প্রকল্পে ‘গ্রামীণ’ নাম থাকলে তার সরকারি অনুমোদন সহজে পাওয়া যায় না।
Published : 24 Dec 2016, 06:55 PM
শনিবার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এ সমস্ত জায়গায় আমাদের একটা মুশকিল হয়ে যায়, বলাও মুশকিল এসব কথা...। সরকারের অনুমোদন পেতে আমাদের বড় কষ্ট হয়। এখানে কেউ ‘গ্রামীণ’ নাম দেখলেই আর এটাতে হাত দিতে চায় না।... যে কোন বিপদে পড়ি আবার।
“অনুমতির জন্য আমরা আটকে থাকি। কাউকে অভিযোগও করতে পারে না। এখানে সমস্যা হয়।”
সামাজিক ব্যবসার আওতায় চট্টগ্রামে একটি নার্সিং কলেজ করার আগ্রহের কথা জানিয়ে সে বিষয়ে আলোচনায় এসব বলেন চট্টগ্রামের সন্তান ইউনূস।
গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইউনূসের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েনের কারণে ব্যাংকটিতে কিছু করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে আসছেন অর্থমন্ত্রী।
ইউনূসকে অপসারণে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও কাজ করেছে বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের অভিযোগ। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের মধ্যে রাজনীতিতে আসার আগ্রহ দেখান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। জনগণের সাড়া না পেয়ে সে পথ থেকে পিছু হটলেও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
ইউনূস বলেন, কয়েক দশক আগে যখন গ্রামীণ ব্যাংক সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন থেকে সরকারের সঙ্গে সমস্যা শুরু, যা এখনও চলছে।
“শুরু হলো ১৯৭৬ সালে, ১৯৮৩ সালে এটাকে ব্যাংকে রূপান্তর করলাম। নাম দিলাম গ্রামীণ ব্যাংক। আইডিয়া হল মালিক হবে সদস্যরা। এটা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চলবে। লাভের টাকা ঋণগ্রহীতাদের কাছেই ফিরে যাবে। বাইরের কেউ পাবে না।
“আইন করতে যখন গেলাম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হল, এভাবে তো পারবেন না। সরকারকে কিছু শেয়ার দিতে হবে। এই পড়লাম বিপদে। ওই যে বিপদে পড়লাম, বিপদ থেকে এখনও মুক্ত হইনি। সেই চক্কর এখনও চলতেছে।”
ব্যাংকের মালিকানা এবং কর্তৃত্ব নিয়েই এই সংকট জানিয়ে এর জন্য সরকারকে দায়ী করেন মুহাম্মদ ইউনূস।
“বহু দর কষাকষির পরে এ আইন সংশোধন করা হল। সংশোধন করে পাল্টানো হল- ৭৫ ভাগ সদস্যদের, ২৫ ভাগ সরকারের। খুশি হলাম, মালিকানা সদস্যদের কাছে আসল। এমনভাবে আইন হল সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে বোর্ড। সদস্যদের প্রতিনিধি ও সরকারের প্রতিনিধি বোর্ডে থাকবে। সেভাবেই চলল। সদস্যদের মালিকানা। এর উপরে সরকারের আর কোনো কথা চলবে না। শুধু বোর্ডের কথাতে চলবে।
“হঠাৎ করে পরবর্তীতে সরকারের শখ হলো যে এটা ওভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এটা সরকারের আয়ত্তে আনতে হবে। তারপরই সমস্যা শুরু হয়ে গেল।”
ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ১৮০ বছর পূর্তির তিন দিনব্যাপী উৎসবের দ্বিতীয় দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ইউনূস।
চট্টগ্রামে একটি নার্সিং কলেজ করতে সিডিএ আবাসিক এলাকায় এরইধ্যে জায়গা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী বছরের মধ্যে কনস্ট্রাকশন শুরু করব।
“আমাদের ইচ্ছা এটাকে সম্প্রসারিত করে এটাকে মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল করা। মেডিকেল কলেজ করতে গেলে হাসপাতাল লাগে। কাজেই এই তিনটা জিনিসই আমাদের একসঙ্গে করতে হবে।”
অনুমোদন পেলে ‘চট’ করে এই কলেজ প্রতিষ্টা হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যদি অনুমোদন না দেয়, অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের করার কিছু নেই।”
“ইংরেজিতে যেটা বলি- এটা হলো নন ডিভিডেন্ট কম্পানি ফর সলভিং আ সোশ্যাল প্রবলেম। কাউকে ব্যক্তিগত কোনো মুনাফা দেয় না। সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য এটা করা, আর কিচ্ছুর জন্য নয়।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে এসে সংলগ্ন জোবরা গ্রামে কৃষকের সেচের সংকট মেটাতে ‘তেভাগা আন্দোলন’ শুরু করার কথাও জানান ইউনূস।
তিনি বলেন, “উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের নিজের খরচে নিজে চলা, কারো কাছে হাত পাততে হবে না। পরবর্তীতে যত কথা বলছি সবকিছুর গোড়া কিন্তু ওইখানে। গ্রামীণ ব্যাংক, সামাজিক ব্যবসা- সূত্র এটাই।”
চট্টগ্রাম কলেজিয়েটসের সভাপতি ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ১৮০ বছর পূর্তি ও পূনর্মিলন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী এবং সদস্য সচিব মোস্তাক হোসাইন বক্তব্য দেন।