ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ‘প্রভাবিত’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
Published : 02 Dec 2016, 09:11 PM
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।
দিয়াজের বোন আইনজীবী জুবায়দা সারোয়ার চৌধুরীর দাবি, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির সময় নিয়মবর্হিভূতভাবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ।
অধ্যক্ষের সেই উপস্থিতি ‘এক নেতার’ নির্দেশে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ‘প্রভাবিত’ করার লক্ষ্যে বলেও দাবি জুবায়দার।
‘সত্য’ উদঘাটনে মেডিকেল কলেজটির অধ্যক্ষের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাইয়ের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনের সমাবেশে জুবায়দা সারোয়ার চৌধুরী বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি- ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
“ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে যে তিনজন চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন তাদের মধ্যে দুই জনকে তিনি বের করে দেন। এটা নিয়ম বহির্ভূত।”
জুবায়দা সারোয়ার চৌধুরী বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির দিন ভোর ৫টায় এক নেতার ফোন পেয়ে তার বাড়িতে ছুটে যান ওই অধ্যক্ষ। সেখান থেকে ফিরে ভোর ৬টায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে আসেন।
“অত ভোরে তার সেখানে থাকার কথা নয়। এরপরই শুধুমাত্র ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে নিয়ে অধ্যক্ষ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। তার কললিস্ট যাচাই করলেই সত্য জানা যাবে। কারা ফোন করেছে তাও জানা যাবে।”
তবে সমাবেশের পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ও ‘ওই নেতার’ বিষয়ে জানতে চাইলে জুবায়দা সারোয়ার চৌধুরী বিস্তারিত কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার পর গণমাধ্যম কর্মীদের দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান।
একই দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও জাহেদা আমিন চৌধুরী বারবার বলেন, “আমার দুটো কথা আছে। তা শুধু প্রধানমন্ত্রীকেই বলব।”
শুক্রবার সমাবেশে দিয়াজের বোন জুবায়দা সারোয়ার চৌধুরী বলেন, সুরতহালে যেসব আঘাতের কথা উল্লেখ আছে, ময়নাতদন্তে তা নেই। প্রতিবেদেন যে ‘সুইসাইডাল’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তা ব্যবহার আইনসম্মত নয়।
২৩ নভেম্বর দিয়াজের যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দেওয়া হয় তাতে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। সেদিনই ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে দিয়াজের পরিবার।
পরদিন ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি টিপুসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা করেন দিয়াজের মা।
এরপর ২৭ নভেম্বর পাঁচ দফা দাবিতে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ছাত্রছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় দিয়াজ অনুসারীরা। ২৮ নভেম্বর সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট এলাকায় ভাড়া বাসার নিজ কক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
দিয়াজ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু এবং দিয়াজ দুজনই নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিতব্য নতুন কলা ভবন ও শেখ হাসিনা ভবনের দ্বিতীয় পর্বের প্রায় ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে টিপু ও দিয়াজের মধ্যে বিরোধ ছিল।
সেই বিরোধ, চাঁদা দাবিসহ নানা কারণে ‘ষড়যন্ত্র’ করে দিয়াজকে হত্যার পর লাশ ঘরে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে শুরু থেকেই দাবি তার পরিবারের।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মামুন, শোভন দাশ শুভ, এনামুল অভি ও নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।