চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বক্তব্যের শেষ দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।
Published : 23 Jun 2016, 09:25 PM
বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন মহিউদ্দিন। এসময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীও তার সঙ্গে চলে যান।
তবে যাওয়ার আগে আ জ ম নাছিরের সাথে সালাম বিনিময় ও করমর্দন করেন মহিউদ্দিন। দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে এছাড়া আর কোনো কথা হয়নি।
দলের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।
বৃহস্পতিবার নগরীর লাভ লেইনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দলের ‘নিস্ক্রিয়’ নেতাকর্মীদেরও সমালোচনা করেন মহিউদ্দিন।
বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য শুরু করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
৬টা ১০ মিনিটের দিকে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন আ জ ম নাছির। এর পাঁচ মিনিট পরই মহিউদ্দিনের বক্তব্য শেষ হয়।
এরপরই মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। এসময় তার সাথে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন।
মহিউদ্দিনের পরপরই সভাস্থল ত্যাগ করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ।
মহিউদ্দিনের পর আরও দুই বক্তার বক্তব্য শেষে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের আরেক সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। নিজের বক্তব্য শেষে তিনিও চলে যান।
দোভাষ ও সুজন নগরীর রাজনীতিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী ওসমান গণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি (মহিউদ্দিন) বাইরে কোথাও ইফতার করেন না।
“জিইসি মোড়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই প্রতিদিন তিনি ইফতার করেন। আজও তিনি এখানেই ইফতার করেছেন। তারপর বাসায় গেছেন।”
নগরীর রাজনীতিতে মহিউদ্দিন ও নাছিরের বিরোধ দীর্ঘদিনের। গত সিটি নির্বাচনের পর কিছুদিন দুই নেতার বিরোধ অপ্রকাশ্য ছিল।
সম্প্রতি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, প্রিমিয়ারের শিক্ষার্থী খুন ও চট্টগ্রাম-মহসিন কলেজে দুই নেতার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ঘিরে বিরোধ আবার আলোচনায় আসে।
‘পদ পেয়ে পিছিয়ে গেলে হবে না’
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই সভার বক্তব্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা পদ পাওয়ার চেষ্টা করি। পদে পেলেই আর এগিয়ে যাই না।
“কোনো পরিস্থিতি বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আহ্বান করলে তিনি (কারো নাম উল্লেখ না করে) দূরে থাকেন। এটাই বর্তমান অবস্থা। দূরে থাকার অনেক সময় আছে। এখন ঈমানি দায়িত্ব পালনের সময়।”
দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, খুনখারাবি সরাসরি বন্ধের চেষ্টা করতে হবে। কারা খুনখারাবি করছে? রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে তাদের চেষ্টা কি সফল হবে?
“রাষ্ট্রক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না। মল্লযুদ্ধ বা খুন নয়- জনমত সৃষ্টি করতে হবে।”
দলের নেতাকর্মীদের ‘ঘর ঠিক করার’ আহ্বান জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন বলেন, “অনেক পরিপন্থি লোককে আমরা ভালো বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দিলাম।
“চট্টগ্রামের অধিকাংশ কলেজের অধ্যক্ষ ওই দলের। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা শিক্ষাদানের দায়িত্বে আছেন তারা আমাদের পরিপন্থি।”
নগরীর ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীরাও দায়িত্ব নিয়ে কোনো কাজ করতে চান না বলে সমালোচনা করেন তিন বারের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন।
সভায় আ জ ম নাছির বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলেই স্বাধীনতার সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারব।
“এক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব আছে। যারা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে তারা অপেক্ষায় আছে- কখন ছোবল মারবে।”
দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সব ষড়যন্ত্র নসাৎ করতে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম চৌধুরী, বদিউল আলম, নঈম উদ্দিন চৌধুরী ও খোরশেদ আলম সুজন এবং ন্যাপের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ নজির বক্তব্য রাখেন।