এক বছর আগে যে বিষয়ে খারাপ করায় কমেছিল পাসের হার ও জিপিএ-৫ এবার সেই গণিতে ভর করেই চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল নিয়ে এসেছেন।
Published : 11 May 2016, 05:26 PM
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে সক্ষম হওয়াকে ফল অর্জনের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২০১৫ সালে গণিতে পাসের হার ছিল ৯১ শতাংশ। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বুধবার ঘোষিত এসএসসির ফলাফলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাশ করেছে ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গতবার এই হার ছিল ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
এবার চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৬৬৬ জন, যা গতবারের চেয়ে ৫৫০ জন বেশি। গতবার এ সংখ্যা ছিল সাত হাজার ১১৬।
বুধবার ফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, “গতবার ফল খারাপ হওয়ার প্রধান কারণ ছিল গণিত।
“সেবার প্রথমবারের মত গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারেনি। মানবিক বিভাগ ও তিন পার্বত্য জেলায়ও ফল খারাপ হয়েছিল গণিতের কারণেই।”
মাহবুব হাসানের দাবির যর্থাথতা মেলে পরিসংখ্যানেও। ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগে পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশে।
তিনি বলেন, গতবার গণিতে যেসব বিদ্যালয়ের ফল খারাপ হয়েছিল আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করি। যেসব বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক সংকট ছিল তা পূরণ করা হয়েছে।
‘আয়ত্তে সৃজনশীল’
প্রতিবার কোনো না কোনো বিষয়ে খারাপ ফলাফল পুরো ফলে প্রভাব ফেললেও এবার সন্তুষ্টির অনেক জায়গা আছে বলে মনে করেন বোর্ডের সচিব ড. পীযুষ দত্ত।
তিনি বলেন “এবার প্রায় সব বিষয়ে ফল ভালো হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা আয়ত্তে নিতে পেরেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।”
এবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে গণিত প্রশ্নপত্রে নৈর্ব্যক্তিকে পাঁচটি এবং সাধারণে একটি প্রশ্ন (চার নম্বর মানের) ভুল ছিল। খাতা মূল্যায়নের সময় ভুল প্রশ্নের কারণে শিক্ষার্থীরাই সুবিধা পেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, “প্রশ্ন ভুল হয়ে গেলে তা সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয় তা আমাদের বিবেচনায় ছিল। তাদের তো কোনো দোষ নেই।”
জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এ বোর্ডে এবার এগিয়ে কলেজিয়েট স্কুল। এ প্রতিষ্ঠানের ৩৭৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “পাঠ্য বইয়ের সাথে যেসব শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা বেশি তারা সৃজনশীল পদ্ধতি সহজে আয়ত্ত করতে পারে।
“শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এখন প্রতিযোগিতার মানসিকতা অনেক বেশি। সবার সচেতনতার কারণে ফলাফল ভালো হচ্ছে।”
বোর্ডে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে।
এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীর মতে, গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালোই হয়েছে।
“আগে পুরো অঙ্ক শেষ করতে না পারলে শূণ্য পেত। এখন তা নয়। ফলে ফেল করার ঝুঁকি কমেছে।”
বোর্ডের ভালো ফলাফলের বিষয়ে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান বলেন, “সৃজনশীল পদ্ধতি আয়ত্ত করতে ভালো শিক্ষকের যে সংকট ছিল তা কেটে গেছে। বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান মানে উন্নতি হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি এখন শিক্ষার্থীদের আয়ত্তে।”
এ প্রতিষ্ঠানের ২৮০ জন এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
ভালো শিক্ষার্থী তাই ফল ভালো
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, ভালো ফলাফলের অন্যতম কারণ এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় ভালো।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান বলেন, “এবার যারা পরীক্ষা দিয়েছে ২০১৩ সালে জেএসসি পরীক্ষায় তাদের পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।
“জেএসসিতে তাদের ১৪ হাজার ১০৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল। যারা দুর্বল তারা জেএসসিতেই ঝরে গেছে। ভালো শিক্ষার্থীরাই এবার এসএসসিতে ভালো ফল করেছে।”
তিনি বলেন, অনেকের ধারণা জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি। আসলে তা নয়। মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ এবার সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েছে।
গণিতের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও এবার পাসের হার খুব ভালো।
বাংলা প্রথম পত্রে ৯৯ দশমিক ২, বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ৯৯ দশমিক ১৪, ইংরেজি প্রথম পত্রে ৯৭ দশমিক ৬১ এবং ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ৯৫ দশমিক ৫৪ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সমাজ বিজ্ঞানে শতভাগ এবং ব্যবসায় উদ্যোগে সর্বনিম্ন ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
জিপিএ-৫ এ এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা
অন্য দুই বিভাগের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম হলেও জিপিএ-৫ পাওয়ায় এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ছয় হাজার ৮৭২ জন। মানবিকে ৩৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৭৬০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
বিজ্ঞানে তিন হাজার ৭৩০ জন ছাত্র ও তিন হাজার ১৪২ জন ছাত্রী, মানবিকে একজন ছাত্র ও ৩৩ জন ছাত্রী এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ২০১ জন ছাত্র ও ৫৫৯ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
এবার এ বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ০৮ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। এছাড়া মানবিকে ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২১ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছেন।
বিজ্ঞানে ছেলেদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ০৭ শতাংশ ও মেয়েদের পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
মানবিকে ৮১ দশমিক ৮৩ শতাংশ ছেলে ও ৮৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ মেয়ে পাস করেছেন। ব্যবসায় শিক্ষায় ৯১ দশমিক ৪৪ শতাংশ ছেলে এবং ৯১ দশমিক ৮১ শতাংশ মেয়ে পাস করেছেন।