শেষ পর্যন্ত হলো না তেমন কিছুই। ট্রেন্ট বোল্টের দারুণ এক ডেলিভারি আর ডিআরএসের ছোঁয়া মিলিয়ে সম্ভাবনাময় ইনিংসটির মৃত্যু। অর্ধশতকের পরপরই শেষ তামিম। টেস্টে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের পঞ্চাশ পেরিয়ে আউট হওয়া অনেক সময়ই পড়ে অপরাধের পর্যায়ে।
সেই প্রশ্ন তোলা যায় এবারও। এর পরও তামিমের ইনিংসটি বিশেষ কিছু। এই ইনিংসই দূর করেছে সবুজের জুজু, বেঁধে দিয়েছে সুর। সেই সুর ভয়ডর করেছে দূর। ২২ গজে তামিম উড়িয়েছেন বল; ড্রেসিং রুমে ফিরেছে সবার মনোবল!
মেঘলা আকাশ, তীব্র বাতাস, সবুজাভ উইকেট। প্রস্তুত ছিল কাঁটার মঞ্চ। টস ভাগ্য বাংলাদেশকে নামিয়ে দিল সেই মঞ্চে। টস জিতে কেন উইলিয়ামসনের ঠোঁটে যখন হাসি, বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে নিশ্চিতভাবেই ছিল শঙ্কার চোরাস্রোত। বেসিন রিজার্ভে প্রথম দিনে হাওয়া আর ঘাসে খাবি খেয়েছে বিশ্বের সেরা ব্যাটিং লাইন আপও।
কিন্তু তামিমের ব্যাটেই শুকিয়ে গেল শঙ্কার স্রোত, জমলো আত্মবিশ্বাসের পলি। শুরুটা যদিও ছিল বিপজ্জনক, প্রথম দুটি চার হলো স্লিপের ওপর আর মাঝ দিয়ে। থমকে না গিয়ে তামিম চললেন আপন পথে, প্রাপ্তিও হাতেনাতে।
১০ চারে ৪৮ বলে ছুঁলেন অর্ধশতক। সুইংয়ের বিষ ছড়াবেন কী, তামিমের ব্যাটের হুলে উল্টো দিশাহারা ট্রেন্ট বোল্ট। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে হেসেছেন বোল্ট। তবে ততক্ষণে অনেকটাই কেটে গেছে বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের মেঘ। সেটিরই প্রতিফলন পড়েছে মুমিনুল হকের ব্যাটে। বাকিরাও জেনেছেন, উইকেট ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি নয়।
নিজের ইনিংসটি থেকে এটিকে বড় প্রাপ্তি মানছেন স্বয়ং তামিমও।
“আমি যদি দেখতাম অন্য কেউ এ রকম খেলছে, তাহলে আমি আত্মবিশ্বাস পেতাম। সেটিই হয়েছে। কারণ প্রথম বলের আগে আমরা ভাবছিলাম কী হতে পারে না হতে পারে। আমার পরে মুমিনুল যেভাবে খেলেছে, তাতে আমরা বুঝেছি যে এখানে রান করাও সম্ভব, টিকে থাকাও সম্ভব। এ রকম একটা ইনিংস হলে সবার মধ্যেই আত্মবিশ্বাস এসে যায়।”
এবার টেস্টে আগে ব্যাটিংয়ের কঠিন পরীক্ষায় নামতে হবে জানার পরই নিজের করণীয় ঠিক করে ফেলেছিলেন তামিম।
“হেরে ব্যাটিংয়ে নামার সময় আমার মনে হয়েছিল, যে কোনো একটা পথে খেলতে হবে। খারাপ বল যেন মিস না হয়। এই ধরনের কন্ডিশনে ওরা ভালো বল করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাউন্ডারি বলগুলোর সুযোগ নিতে পারলে স্কোরবোর্ড সচল থাকবে, নিজেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আমি ইনিংসজুড়ে এটাই চিন্তা করেছি যে স্কোর করার সুযোগ মিস না হয়। যতগুলো সুযোগ পেয়েছি, কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।”
“দল থেকে নির্দেশনা কিছু ছিল না। আমার নিজেরই পরিকল্পনা ছিল। এটা ভাবিনি যে শুধু আক্রমণই করব। তবে ঠিক করেছিলাম স্কোরিং শট মিস করব না।”
দারুণ সম্ভাবনাময় ইনিংসটি ৫৬ রানে থমকে যাওয়ায় হতাশা আছে। তবে দলকে বল দেওয়ার পাশপাশি আরেকটা সান্ত্বনাও আছে তামিমের।
“ইনিংস বড় করতে না পারলে অবশ্যই খারাপ লাগে। তবে একটা ভালো ব্যাপার ছিল যে আমি বাজে শট খেলে আউট হইনি। ভালো বল ছিল। বাজে খেলে আউট হলে আরও বেশি আফসোস করতাম।”
তামিমের ব্যাটে ভয়কে জয়, মুমিনুলের ব্যাটে সেটিরই এগিয়ে চলা। জীবন পেয়ে টিকে সাকিব, অপেক্ষায় মুশফিক-সাব্বির। অপেক্ষায় কি আরও সুসময়?