গুমোট দিনে তামিম-মুমিনুলের আলো

চারপাশে দমকা হাওয়ার শো শো শব্দ, যেন উড়িয়ে নেবে সব কিছু। ঘূর্ণিঝড় নয়, ওয়েলিংটনে এই তীব্র বাতাস নিত্য দিনের ব্যাপার! মেঘলা আকাশও স্বাভাবিক এখানে। উইকেটে সবুজের ছোঁয়া তো প্রত্যাশিতই। বাংলাদেশের ভেঙে পড়াটা তাই অস্বাভাবিক হতো না। বরং হলো উল্টো!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি ওয়েলিংটন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2017, 06:56 AM
Updated : 12 Jan 2017, 12:21 PM

প্রকৃতির প্রতিকূলতা আর বাস্তবতার বাধাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হলো দারুণ। ওয়েলিংটনের আকাশ গুমোট থাকল দিনভর। তবে বেসিন রিজার্ভের ২২ গজে আলো ছড়ালেন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক।

বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতায় সারাদিনে খেলা হলো ৪০ ওভার ২ বল। এই সময়ে অসাধারণ কিছু করার সুযোগ ছিল না, তবে বাজে কিছুর অবকাশ ছিল। সেই শঙ্কাও ছিল। শঙ্কাগুলো দূরে ঠেলেছে তামিমের ব্যাট; মুমিনুলের ব্যাট নিশ্চিত করেছে ফিরতে না দেওয়া। বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ৩ উইকেটে ১৫৪ রান নিয়ে।

অতীতের বাংলাদেশ কতটা পেছনে, সেটি বোঝাতে একটি তথ্যই যথেষ্ট। বেসিন রিজার্ভে আগের চার ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৪৩!

দিনটা আরও ভালো হতে পারত, যদি মুহূর্তের অসর্তকতায় নিজের উইকেট উপহার না দিয়ে আসতেন মাহমুদউল্লাহ। তবে আরও খারাপও হতে পারত, যদি খেলা শেষের খানিক আগে সাকিব আল হাসানের ক্যাচ নিতে পারতেন মিচেল স্যান্টনার।

খুব বেশি উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ রানও তুলেছে ওভারপ্রতি প্রায় ৪ করে। এই কন্ডিশনে এসে উপমহাদেশের অন্য দলগুলি ভুগেছে অতি সাবধানী ব্যাটিংয়ে। বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে অনেকটাই চমকে দিয়েছে কিউইদের। বিশ্বের অ্যনতম সেরা পেস জুটি টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট রান গুণেছেন ওভারপ্রতি চারের বেশি।

কন্ডিশনের কারণে টস জয়টা খুব করে চাইছিল বাংলাদেশ। হেরে নামতে হলো ব্যাটিংয়ে। তামিম মনোভাব বুঝিয়ে দেন শুরু থেকেই। ম্যাচের তৃতীয় বলেই চালিয়ে দেন বাইরের বলে। স্লিপ কর্ডনের ওপর দিয়ে চার। বোল্টের পরে ওভারে আবার কানায় লেগে চার স্লিপে মাঝ দিয়ে। পরের বলেই দারুণ এক কাট শট, এবার মাঝব্যাটে চার। তামিম মেলে দিলেন ডানা।

ইমরুল কায়েস ফেরেন বাজে এক শটে। লেগ সাইডে সীমানায় মাত্র একজন ফিল্ডার ছিল। সাউদির শর্ট বলে সেই লং লেগের হাতেই বল তুলে দিলেন ইমরুল। তামিমের ব্যাটিংয়ের ধরণে প্রভাব ফেলেনি তা এতটুকুও। খেলতে থাকেন দারুণ সব শট।

সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন বোল্টকে। বল ফেলার জায়গাই দিচ্ছিলেন না। বাংলাদেশের রান যখন পঞ্চাশ পেরুলো, তামিমেরই তাতে ৪৯! সাউদিকে কাভার ড্রাইভে তিন রান নিয়ে অর্ধশতক ছুঁলেন ৪৮ বলে, চার ১০টি।

দুর্দান্ত ইনিংসটি শেষ হয় দারুণ এক বলে। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা বোল্টকে চার দিয়েই স্বাগত জানিয়েছিলেন তামিম। বোল্টের ১৬ বলে যেটি ছিল তার ষষ্ঠ চার। ১৭ নম্বর বলটিতেই বাঁহাতি পেসারের হাসি। একটু ভেতরে ঢোকা বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ তামিম (৫০ বলে ৫৬)।

মুমিনুল তখনও ছিলেন খোলসে ঢুকে। দলের সঙ্গে আছেন সফরের শুরু থেকে, তবে স্রেফ অতিথির মতো হয়ে। রঙিন পোশাকে সুযোগ হয় না, সময় কেটেছে নেটে ব্যাট করে। এজন্যই বুঝি থিতু হলেন সময় নিয়ে। তামিম আউট হওয়ার পর গা ঝাড়া দিলেন। খেললেন নিজের চেনা সব শট।

একসময় মনে হচ্ছিলো এই জুটিতেই হবে দিন পার। ২৯ ওভার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ তিন ঘণ্টা। দিনের খেলা শেষের আয়োজন যখন চলছে, তখনই আবার শুরু। মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের ঘণ্টাও যেন বাজল।

ওই স্পেলটায় দারুণ ভোগাচ্ছিলেন নিল ওয়াগনার। শরীরে বল করে নাড়িয়ে দিয়ে আবার বাইরে বল করে টেনে আনছিলেন ব্যাটসম্যানদের। সেই ফাঁদেই পা দিয়ে মাহমুদউল্লাহর হতাশাজনক বিদায়। ভাঙল ৮৫ রানের জুটি।

খানিক পর ওয়াগানারের বলেই মিড উইকেটে সাকিবের ক্যাচ ছেড়ে স্যান্টনার বাংলাদেশকে দিলেন স্বস্তি। আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হলো আগেই। ৬৪ রানে অপরাজিত মুমিনুল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিং গড় আপাতত ২২২। দিন শেষে তামিম ইকবাল বললেন, প্রথম দিনের পারফরম্যান্সে দল যথেষ্টই খুশি।

তবে অতীত আর এবারেরই ওয়ানডে-টি টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা বলছে, এই খুশি মিলিয়ে যেতে পারে মুহূর্তেই। বাংলাদেশের ব্যাটিংও তো ওয়েলিংটনের আবহাওয়ার মতোই। এই ভালো, এই খারাপ!

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টির শঙ্কা নেই। বাংলাদেশের ইনিংসও কি থাকবে রোদ ঝলমল?

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪০.২ ওভারে ১৫৪/৩ (তামিম ৫৬, ইমরুল ১, মুমিনুল ৬৪*, মাহমুদউল্লাহ ২৬, সাকিব ৫*; বোল্ট ১/৫৩, সাউদি ১/৪৫, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/২৬, ওয়াগনার ১/২৮)।