ঋণে অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিতে সময় নিয়েও তা দেননি অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ।
Published : 16 Mar 2016, 07:45 PM
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকটির এই কর্মকর্তাকে কেন অপসারণ করা হবে না, জানতে চেয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নোটিস দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাকে ৩ মার্চের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
অপসারণের আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
চিঠি পেয়ে হামিদ জবাব দিতে এক মাসের সময় চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে ১৩ দিন সময় বাড়িয়ে ১৬ মার্চের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশনা দেয়।
বুধবার সেই সময় শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হামিদের পক্ষ থেকে কোনো জবাব আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি জবাবও দেননি, সময়ও চাননি।”
রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর পরিবর্তনের পর চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকের এমডির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তেও আসেনি বলে জানান তিনি।
কেন জবাব দেননি- জানতে হামিদের মোবাইলে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
মুন গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান।
মুন গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার কারণে গত ২১ জানুয়ারি ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মিজানুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হামিদকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এরপর অগ্রণী ব্যাংক মিজানুরকে ব্যাংকের নিয়মিত কাজের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়।
বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরও সাড়ে তিন বছর আগে মুন গ্রুপের একটি প্রকল্পে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ দেয় অগ্রণী ব্যাংক। এরপর মুন গ্রুপ থেকে কোনো টাকা ফেরত পায়নি ব্যাংক।
টাকা উদ্ধারে গত আগস্টে মুন গ্রুপের ভবনসহ জমি বিক্রির চেষ্টা করে অগ্রণী ব্যাংক, কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে পারেনি।
মুন গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ঢাকার এক সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। রাজধানীর কল্যাণপুরে যে জমি দেখে তাদের ঋণ দিয়েছিল অগ্রণী ব্যাংক, ওই জমি দখল করা বলে অভিযোগ রয়েছে।
শেখ মো. জয়নাল আবেদীন এবং তার ছেলে শেখ মো. আবদুল গণি জমিটি তাদের দাবি করে অগ্রণী ব্যাংকে জমির দলিলও দাখিল করেন।
দলিল না দেখেই ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দেওয়ার জন্য তিন বছর আগেই অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিকে দায়ী করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়, “এমডির জ্ঞাতসারে ও প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে এবং মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র মুন গ্রুপকে ঋণ দিয়ে আমানতকারীদের বিপুল অঙ্কের টাকা ঝুঁকিগ্রস্ত করেছে।”
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি পাঠানোর পর উল্টো ফলই দেখা গিয়েছিল।
মিজানুরকে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটির মহাব্যবস্থাপক থেকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে পদোন্নতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে হামিদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয় তিন দফায়।