মুক্তমনার পক্ষে ‘দ্য ববস’ পুরস্কার নিলেন বন্যা

জার্মান সম্প্রচার মাধ্যম ডয়চে ভেলের ‘দ্য ববস-সেরা অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশি ব্লগ সাইট মুক্তমনা।

নুরুল ইসলাম হাসিব জার্মানির বন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2015, 07:28 PM
Updated : 24 June 2015, 02:14 PM

এই ব্লগ সাইটের প্রতিষ্ঠাতা নিহত অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা মঙ্গলবার জার্মানির বন শহরে ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম’ এ মুক্তমনার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সন্ত্রাসীর চাপাতির আঘাতে নিহত ব্লগার-লেখক অভিজিৎ ও বন্যার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মুক্তমনাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

‘দ্য ববস-বেস্ট অফ অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ অ্যাওয়ার্ডের ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মুক্তমনা।

“বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে, ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে মুক্তমনা ব্লগ৷ আর সেই কাজের জন্য চড়া মূল্যও দিতে হয়েছে সাইটটিকে,” বলেছে ডয়চে ভেলে।

ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হুমকির মুখে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ ও বন্যা বইমেলায় অংশ নিতে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ফিরলে তাদের উপর হামলা হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হামলাকারীদের চাপাতির আঘাতে নিহত হন অভিজিৎ। হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও এক আঙুল হারান বন্যা। মাথায়ও গুরুতর আঘাত পান তিনি।

রাফিদা আহমেদ বন্যা (২৬ ফেব্রুয়ারি হামলার পরের ছবি)

অভিজিৎ রায় ও রাফিদা আহমেদ বন্যা (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

ডয়চে ভেলে বলেছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে মুক্তমনার কাজে ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং সেখান থেকে তারা হত্যার জন্য ৮৪ জন ব্লগার ও সাংবাদিকের একটি তালিকা প্রকাশ করে, যাদের আটজনকে এরইমধ্যে মেরে ফেলা হয়েছে’।

মুক্তমনাকে এই পুরস্কার বিশ্বব্যাপী ‘বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ করে যাওয়া সব নারী-পুরুষের মনোযোগ কেড়েছে’ বলে বলছে দ্য ববস জুরিমণ্ডলী।

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করে বিশ্বে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে-এমন প্রকল্পকে সম্মান জানাতে ‘সামাজিক পরিবর্তন’ বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। 

পুরস্কার গ্রহণ করে বন্যা বলেন, “মুক্তমনার যে কোনো অর্জন বা প্রাপ্তি অভিজিতের কাছে ছিল দুনিয়া পাওয়ার মতো ব্যাপার৷ মুক্তমনা ছিল অভিজিতের গর্ব ও আনন্দ৷ এই অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে পারলে তার চেয়ে সন্তুষ্ট কেউ হতে পারত না৷

“দ্য ববস অ্যাওয়ার্ড মুক্তমনা মডারেশন টিম, ব্লগার এবং সামগ্রিকভাবে মুক্তমনা কমিউনিটিকে তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে।”

ডয়চে ভেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তমনা ব্লগ সাইট কয়েকবার হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হয়৷

“সেই সময় মুক্তমনা টিম নিরলস পরিশ্রম করে সাইটটিকে সক্রিয় রেখেছেন৷ এমনকি সার্ভারও পরিবর্তন করা হয়েছে৷”

দ্য ববস’র ‘শিল্প ও সংবাদমাধ্যম’ ক্যাটাগরিতে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে ‘জয়তুন,দ্য লিটল রিফিউজি’প্রকল্প৷

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে গৃহহীন সিরীয়-ফিলিস্তিনি শরণার্থী জয়তুন-এর জীবনসংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে এই ব্লগে।

এছাড়া গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মেক্সিকোর ‘রেনকো ইলেক্ট্রোনিকো’ প্রকল্প৷

ছবি: ডয়চে ভেলের সৌজন্যে

স্বেচ্ছাসেবী এই প্রকল্পের আওতায় সেদেশের মানুষকে ইন্টারনেটে তথ্য সুরক্ষা এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিষয়ক বুদ্ধি-পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। রুবেন ওমর ভ্যালেন্সিয়া পেরেজ এই প্রকল্পের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।  

প্রতিযোগিতায় বাক স্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন সৌদি আরবে কারাবন্দি ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি। ইসলাম ‘অবমাননার’ অভিযোগে গত বছর মে মাসে এই ব্লগারকে এক হাজার বেত্রাঘাত, ১০ বছরের কারাদণ্ড ও বড় অঙ্কের জরিমানা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

অনুষ্ঠানে ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পিটার লিমবার্গ বলেন, “মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন বাদাউয়ি।”

বিশ্বব্যাপী কারাবন্দি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তি দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে অংশগ্রণকারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া এবছর প্রতিযোগিতায় ভাষাভিত্তিক বিভাগে বাংলায় ‘পিপলস চয়েস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ‘টুনস ম্যাগাজিন’৷ ইউরোপ প্রবাসী কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান এ সাময়িকী সম্পাদনা করেন। তিনি ২০০৭ সালে একটি কার্টুনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।