চট্টগ্রামে মা-মেয়ে ‘খুনে’ আত্মীয়, কারণ ‘অর্থ লুট’

চট্টগ্রামে মা-মেয়ে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদেরই এক আত্মীয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ জানিয়েছে, বিয়ের জন্য অর্থ জোগাড় করতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2015, 11:28 AM
Updated : 27 May 2015, 11:29 AM

গ্রেপ্তার বেলাল হোসেন (১৯) নিহত নাসিমা বেগমের (২৮) স্বামী শাহ আলমের খালাত ভাই। মাংস বিক্রেতা শাহ আলমের এই ভাই বিদ্যুৎ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন।

গত ৭ মে সকালে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় একটি ছয়তলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে নাসিমা ও তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর লুট হওয়া নাসিমার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে বেলালকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

বেলালের দেওয়া তথ্যে বুধবার সকালে বাকলিয়া এলাকার একটি গহনার দোকান থেকে চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারের পর তাকে সাংবাদিকদের সামনে আনে পুলিশ।

নিহতের স্বামী শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার ছোট খালার ছেলে বেলালের তার বাসায় যাতায়াত ছিল। ঘটনার আগের দিনও তিনি বাসায় গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক কাজ করেছিলেন।

বেলাল এক সময় শাহ আলমের মাংসের দোকানে কাজ করলেও পরে মাসে ৮ হাজার টাকা বেতনে জেনারেটরের দোকানে কাজ নেয়।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলাল একটি মেয়েকে পছন্দ করত। তাকে বিয়ে করতে টাকার প্রয়োজন বলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।”

তিনি জানান, শাহ আলমের বাসা থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট নেওয়ার পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কারও লুট করেছিলেন বেলাল। গহনাগুলো বাকলিয়া এলাকায় একটি দোকানে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

বেলাল ওই টাকা দিয়ে হবু বধূকে একটি টিভি ও ডিভিডি প্লেয়ার কিনে দিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, যা উদ্ধার করা হয়েছে। নাসিমার মোবাইল ফোনটি হবু বধূর ভাইকে দিয়েছিলেন তিনি।    

হত্যাকাণ্ডস্থল

পুলিশ কর্মকর্তা কুসুম দেওয়ান বলেন, বিয়ের জন্য অর্থ জোগাড়ে ভাইয়ের বাসায় ডাকাতির পরিকল্পনা নিয়ে শাহ আলমের দোকান থেকে একটি ছুরি চুরি করে এনেছিলেন বেলাল। পরে ওই ছুরি দিয়েই হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।

৭ মে নাসিমা বেগমের দুই ছেলে স্কুলে রওনা হওয়ার পর বেলাল ওই বাসায় ঢুকেছিলেন বলে জানান তিনি।

“কেন বাসায় এসেছ- নাসিমা জানতে চাইলে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে বেলাল। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে নাছিমা মাটিতে পড়ে গেলে বেলাল তার গলা কাটে। আওয়াজ শুনে রিয়া এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাতের পর বাথরুমে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে বেলাল।”

হত্যাকাণ্ডের পর মনোহরখালী বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে টাকা-পয়সার হিসাবের পর সেলুনে চুল কেটে বেলাল তার বাসায় ফিরে যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

খুনের পর লাশ দাফনেও

ভাবি ও ভাতিজি খুন হওয়ার পর লাশ নামানো থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত সব কাজেই সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন বেলাল। তবে তখন কেউই জানতেন না যে এই তরুণই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত।

নাসিমা আক্তার ও রিয়া

পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর বলেন, “হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেলালকে দুই বার এনেছিল। কিন্তু তখনও সে কিছু স্বীকার করেনি।”

উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান বলেন, চুল কেটে বাসায় ফেরার পর ফের ভাইয়ের বাসায় যান বেলাল। সেখানে লাশ নামানো থেকে শুরু করে সব কাজ করেন।

বেলালকে সন্দেহের কথা নিজের মনেও কখনও আসেনি বলে নাসিমার স্বামী শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

“বেলালকে আমার স্ত্রী ছোট ভাইয়ের মতো আদর করত। বিভিন্ন সময়ে বাসায় গিয়ে বেলাল ভাত খেত। অনেক সময় রাতেও সে আমাদের বাসায় থাকত।”

রিয়াসহ তিন সন্তানকেও বেলাল আদর করতেন এবং তারাও চাচাকে পছন্দ করত বলে শাহ আলম জানান।

“বেলাল তিন সন্তানকে খুব আদর করত। বিভিন্ন সময়ে তাদের চকলেটসহ বিভিন্ন জিনিস কিনে খাওয়াত।”