দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকার ছয় তলা একটি বাড়ির চতুর্থ তলার বাসায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১০টার মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা।
নিহতরা হলেন- স্থানীয় মাংস বিক্রেতা শাহ আলমের স্ত্রী নাসিমা বেগম (২৮) এবং তাদের মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনী (১০)।
বসার ঘরে নাসিমার এবং কয়েক গজ দূরে বাথরুমে রিয়ার লাশ পাওয়া যায় বলে সদরঘাট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।
ঘটনার সময় শাহ আলম ঘরে ছিলেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তার অন্য দুই ছেলেও ছিল স্কুলে।
ঘর থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও এক লাখ ২০ হাজার টাকা খোয়া গেছে বলে শাহ আলম পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এটা পেশাদার খুনিদের কাজ নয়। চুরি কিংবা ডাকাতি করতে এসে খুন করা হয়েছে মা-মেয়েকে।
সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাসার ‘কাজের বুয়া’ এসে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি প্রথম দেখতে পান বলে শাহ আলমের শ্যালক মোহাম্মদ আলাল জানিয়েছেন।
দক্ষিণ নালাপাড়ায় গলির মুখেই শাহ আলমের একটি মুরগির দোকান রয়েছে, এটি তার শ্যালক আলাল দেখাশোনা করেন। অল্প দূরে মুনস্টার গলির মুখে খাসির মাংসের দোকানটি শাহ আলম নিজে চালান।
শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল পৌনে ৮টার দিকে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর সকাল ৯টা ৭ মিনিটে দুই ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্ত্রী নাসিমার সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়।
আলাল বলেন, “সোয়া ১০টার দিকে বাসার দরজা খোলা পেয়ে কাজের বুয়া ঘরে ঢুকে দেখে ভেতরে রক্তাক্ত লাশ। তখন সে এসে আমাকে জানালে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।”
এরপর পুলিশ গিয়ে বাসাটি ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থলে যান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বসার ঘরের অয়্যারড্রবের ওপর একটি রক্তমাখা ছুরি পাওয়া গেছে বলে ওসি আজাদ জানান।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আবদুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘরের স্টিলের আলমারির মূল দরজা ও একটি ড্রয়ার খোলা এবং একটি ড্রয়ারের লক ভাঙা পাওয়া গেছে।
“ঘর ছাড়াও সিঁড়িতে রক্তের দাগ রয়েছে। সিঁড়িতে আমরা একটি ছোট কাপড়ের ব্যাগ পেয়েছি, যেটা সোনার গয়না রাখার কাজে ব্যবহার হত বলে মনে হয়েছে।”
বনজ মজুমদার বলেন, “শাহ আলম তার বাসা থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও এক লাখ ২০ হাজার টাকা খোয়া গেছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন।”
কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে করছে বলে জানান তিনি।
সিআইডির পরিদর্শক মিতুশ্রী বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নাসিমার বুক, পেট, পিঠ ও উরুতে ও গলার পাশে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। ফাল্গুনীকে জবাই করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৬টি আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলামত দেখে মনে হচ্ছে, পেশাদার কোনো খুনি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়।
“চুরি কিংবা অন্য কোনো ঘটনা ঘটাতে খুনিরা বাসায় ঢুকেছিল। তাদের চিনে ফেলায় এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।”
শাহ আলম ও নাসিমা দম্পতির তিন সন্তানের গৃহ শিক্ষক মো. রকিকে (২২) পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বলে জানান সহকারী কমিশনার রউফ।
এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নিহত ফাল্গুনী মাদারবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। অন্য দুই সন্তান আরেকটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
মোবাশ্বের হোসেন ওরফে বাবুল কন্ট্রাকটরের ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে ওঠেন শাহ আলম।
মোবাশ্বের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী থাকবে বলে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল তারা। কিন্তু পরে দোকান কর্মচারীসহ অন্যরাও ওই বাসায় থাকত।