চট্টগ্রামবাসী আগে চান জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের অনেক প্রতিশ্রুতির ভিড়ে সাধারণ নগরবাসীর প্রত্যাশার প্রথমেই আছে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2015, 07:38 PM
Updated : 18 April 2015, 07:47 PM

নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, তাদের প্রত্যাশা খুবই ‘অল্প’।

ভোটারদের প্রত্যাশার তালিকায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির পর রয়েছে, নিয়মিত ডাস্টবিন ও নালার আর্বজনা পরিষ্কার করা, সড়ক মেরামত ও সম্প্রসারণ, সড়ক বাতির ব্যবস্থা করা, পানি-গ্যাসের সংযোগ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগরী গড়া।

তবে মেয়র প্রার্থীরা মেগাসিটি, আধুনিক নগরী, মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার, গ্রিন সিটি, পর্যটন নগরী, ওয়াইফাই সুবিধা, দরিদ্র তহবিল গঠনসহ নানা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নগরবাসীকে।

সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, প্রতিশ্রুতির জোয়ারে না ভাসিয়ে দৈনন্দিনের কষ্ট লাঘবে কাজ করা উচিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। অথচ বছরের পর বছর ধরে নগরবাসীর সমস্যার সমাধান হয় না।

১৩ এপ্রিল নগরীতে এক অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও।

তিনি বলেছিলেন, “নির্বাচন আসলেই প্রার্থীরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়ান। বাস্তবায়নের সময় আসলে বলেন, এ বছর পারিনি। আগামী বছর করব।”

নগরীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রকৌশলী নেজাম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স দিই সত্যি, কিন্তু কোনো নাগরিক সেবা পাই না।

“বর্ষায় বৃষ্টি হলেই ওয়ার্ডের খালের পাড় উপচে পানি লোকালয়ে চলে আসে। কিছু সড়ক পাকা হয়েছে কিন্তু সড়ক বাতি অপর্যাপ্ত। মাহমুদাবাদ এলাকায় একটি সড়কে বাতি দেওয়ার জন্য কয়েকবার কাউন্সিলরের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।”

নেজাম উদ্দিন বলেন, এখানে ওয়াসার পানির সংযোগ নেই। গ্যাস সংযোগও নেই। এসব মৌলিক চাহিদা আগে পূরণ করতে হবে। তারপর অন্য প্রতিশ্রুতি।

নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায় জলাবদ্ধতা এখন নিয়মিত সমস্যা। বর্ষা মৌসুমের পাশাপাশি অন্য ঋতুতেও জোয়ারের সময় আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

সিডিএ এলাকার বাসিন্দা শহিদুল আলম বলেন, “নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় বছরের বেশিরভাগ সময় জলাবদ্ধতায় থাকি। সবাই আশ্বাস দেয়। কিন্তু সমাধান আর হয় না।”

নগরীর আগ্রাবাদের মতই হালিশহর, বাকলিয়া, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, পতেঙ্গার কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতাই এখন মূল সমস্যা।

মোহরা ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল আমিন বলেন, ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্প মোহরাতেই অথচ এখানকার ৬০ শতাংশ এলাকায় ওয়াসার ‍পানি সরবরাহ নেই। নেই গ্যাস সংযোগও।

মোহরার মতো আগ্রাবাদ, পাঠানটুলি, লালখান বাজার, বায়েজিদ, বাকলিয়া এবং পতেঙ্গার কয়েকটি এলাকায় খাবার পানির সংকট প্রকট।

নগরীর আল ফালাহ গলির বাসিন্দা ইশতিয়াক আল মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের মত একটি ঐতিহ্যবাহী বন্দর নগরীতে পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি।

“মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে পরিচ্ছন্নতায় চট্টগ্রাম সারাদেশে দৃষ্টান্ত ছিল। এখন অপরিচ্ছন্নতা, নালা-নর্দমা ভরাট, সরু সড়ক আর বর্ষায় জলাবদ্ধতার সঙ্গেই আমাদের বসবাস।”

নগরীর ইপিজেড মোড়, নিউমার্কেট এলাকা, আগ্রাবাদ, দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আন্দরকিল্লাসহ বেশ কিছু মূল সড়কের ফুটপাত গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হকারদের দখলে।

এছাড়া বাকলিয়া, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, বন্দর, স্টেশন সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের প্রকোপও নগরবাসীর অন্যতম প্রধান যন্ত্রণা।

পরিবেশ আন্দোলন সংগঠন পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জলাবদ্ধতা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং বিশেষজ্ঞ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন।

“আগের কয়েক মেয়াদের ‍অভিজ্ঞতা নগরবাসীর জন্য সুখকর নয়। এখন আর বেশি প্রত্যাশা করে না। জেলার ও দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে নগরীতে আসে। তাদের প্রত্যাশা পরিচ্ছন্ন নগরীতে একটু স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে দিন যাপন।”

শরীফ চৌহান বলেন, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এককভাবে খুব বেশি কিছু করতেও পারবে না। অল্প প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করাই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।