তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের মুখ চেনানোর প্রচারে ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে।
Published : 17 Mar 2015, 12:46 PM
নির্বাচন কমিশন এখনো ভোটের দিনক্ষণ ঠিক করতে না পারলেও ৬২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশন ছেয়ে গেছে পোস্টার আর বিলবোর্ডে।
যত্রতত্র পোস্টার লাগিয়ে এই প্রচার সব সময় নিয়মের মধ্যে থাকছে না। আর আগাম এই প্রচারে এগিয়ে আছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে সরকার সমর্থক সম্ভাব্য প্রার্থীরাই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে উত্তরের সীমানায় বাংলামোটর মোড়। সেখানে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকের বিশাল এক বিলবোর্ড। উত্তরের মেয়র পদে তিনিই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন পাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পোট্রেট বাঁয়ে রেখে এ বিলবোর্ডের ডান পাশ থেকে নগরবাসীর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন আনিসুল হক।
বিলবোর্ডে লেখা হয়েছে- ‘ঢাকায় ৮৩ ভাগ মানুষ থাকে ভাড়া বাড়িতে, ৪০ লাখ বস্তিবাসী। আবাসন ও বিনোদন সমস্যা চিহ্নিত, এবার সমাধান যাত্রা।”
আনিসুল হকের পক্ষে এই বিলবোর্ডে ভোট চেয়েছে ‘আমরা ঢাকা’। তার নির্বাচনী প্রচরের ফেইসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইটের ঠিকানাও সেখানে দেওয়া হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের একই ডিজাইনের বহু বিলবোর্ড চোখে পড়ে শ্যামলী, মিরপুর-২, আগারগাঁও লিংক রোড, মহাখালী কাঁচা বাজার ও চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেইট ও মহাখালী ফ্লাইওভার সংলগ্ন সড়কদ্বীপে চোখে পড়ে আনিসুল হকের নামে ব্যানার ও পোস্টার।
মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে একই প্রার্থীর পক্ষে ভিন্ন নকশার একটি বিলবোর্ড চোখে পড়ে, সেখানে আনিসুল হকের পক্ষে ভোট চাইছেন মানিকদি বাজার ব্যাবসায়ী কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন।
গুলিস্তান থেকে গাবতলী এবং মিরপুর থেকে উত্তরার পথে চলাচলকারী বিভিন্ন পাবলিক বাসের পেছনেও আনিসুল হকের নামে প্রচারের পোস্টার চোখে পড়ে, যদিও যানবাহনে ভোটের পোস্টার লাগানোর নিয়ম নেই।
আগাম প্রচারে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারও। তবে তার নামে পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড মিরপুর এলাকাতেই বেশি দেখা যায়।
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্কর থেকে পল্লবী যেতে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উল্টো পাশে দেখা যায় কামাল মজুমদারের পক্ষে একটি বিলবোর্ড।
একপাশে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি রেখে বিলবোর্ডের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে রয়েছে কামাল মজুমদারের ছবি।
সেখানে লেখা হয়েছে- ‘দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল মজুমদারকে মেয়র পদে দেখতে চাই। প্রচারে কাফরুল ও মিরপুরবাসী।’
তবে মেয়র পদে নির্বাচন করতে হলে আগে সাংসদ পদ ছাড়তে হবে কামাল মজুমদারকে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যদি পদত্যাগ করতে হয় তাহলে অবশ্যই করব, নিয়ম তো মানতেই হবে। তবে আমার প্রার্থিতার বিষয়টি নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপরে। তিনি যদি দাঁড়াতে বলেন দাঁড়াব, আর না হয় দাঁড়াব না।”
প্রার্থীতার বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে থাকলে পোস্টার-বিলবোর্ড কেন- এমন প্রশ্নে এই আওয়ামী লীগ নেতার দাবি, সেগুলো টাঙিয়েছে তার সমর্থকরা।
“আমি নিজে এখনো প্রচর শুরু করিনি। আমার সমর্থকরা এসব প্রচার চালাচ্ছে।”
জাতীয় পার্টি ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুলকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী হচ্ছেন আবদুল্লাহ আল কাফি রতন।
যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসযোগ্য মানবিক ঢাকা, দুর্নীতিমুক্ত সিটি কর্পোরেশন, নগর এলাকায় নারী নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্ন ঢাকা আমার মূল অঙ্গীকার।”
ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন জানিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, “কাজ শুরু করেছি। তেজগাঁও, বেগুনবাড়ী, পূর্ব নাখালপাড়া এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়েছি। প্রচারণা চলবে।”
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দুই মামলায় কারাগারে থাকলেও তিনি ঢাকা উত্তরের মেয়র পড়ে লড়বেন বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এ নির্বাচন নিয়ে এখনো কিছু জানায়নি।
মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুনে সরব। অনেকেই এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন এলাকায় নিজেদের পরিচিতি বাড়ানোর জন্য।
যত্রতত্র বিলবোর্ড-পোস্টার লাগিয়ে নির্বাচনের আগাম প্রচার চললেও তফসিল ঘোষণার আগে সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে অপারগতা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশনের এখন কিছু ‘করার নেই’ জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে ঠেলেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
গত রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “তফসিলের আগে যারা প্রচারণা করছেন, তাদের নজরদারি করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ মুহূর্তে ইসির আইনে তা কভার করছে না।”