যত্রতত্র বিলবোর্ড-পোস্টার লাগিয়ে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগাম প্রচার চললেও তফসিল ঘোষণার আগে সেই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে অপারগতা জানাল নির্বাচন কমিশন।
Published : 15 Mar 2015, 09:54 PM
এক্ষেত্রে কিছু করার নেই জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ঠেলে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।
তিনি বলেছেন, তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার পর নির্বাচনী ব্যয়ে আগাম খরচের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার-বিলবোর্ডে এরই মধ্যে ছেয়ে গেছে দুই নগরী।
যত্রতত্র পোস্টার কিংবা দেওয়াল লিখন ঠেকাতে একটি আইন ২০১২ সালে প্রণীত হয়েছে। ওই আইনে আবার নির্বাচনের সময় ইসির এখতিয়ারের বিষয়টিও রয়েছে।
এতে সংসদ বাদে অন্য নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ইসি পরিচালিত এসব নির্বাচনের ক্ষেত্রে পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে নির্ধারিত শর্তে দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাবে। তবে এক্ষেত্রে অনুমোদিত পোস্টার বা দেওয়াল লিখন নির্বাচন শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মুছে ফেলতে হবে।
তবে তফসিল ঘোষণার পরই কেবল আইন বলে ইসি এই বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে বলে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ জানান।
তিনি রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “তফসিলের আগে যারা প্রচারণা করছেন, তাদের নজরদারি করবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ মুহূর্তে ইসির আইনে তা কভার করছে না।”
আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো হলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও এ অপরাধের বিচার করা যাবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে আচরণবিধি প্রয়োগ করবে ইসি। নির্বাচনী আচরণবিধিতে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীদের প্রচারের বিধান রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রার্থীদের আগাম প্রচারে কমিশন অনেকটাই অসহায়। এ বিষয়ে প্রার্থীদের পোস্টার-বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে অনুরোধই কেবল জানাতে পারেন তারা।
তফসিল ঘোষণার পরও আগাম প্রচারণামূলক পোস্টার-বিলবোর্ড থাকলে তা নজরদারিতে এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে শাহনেওয়াজ বলেছেন, প্রার্থী হলে সংশ্লিষ্টদের আগাম প্রচারণার এই খরচও দেখাতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থীরা ২৩ লাখ ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে ১৮ লাখের বেশি ভোটারের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাউন্সিলররা ভোটার ভেদে সর্বোচ্চ ছয় লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ।
টিভি ও গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণামূলক কাজও ব্যয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে জেল-জরিমানাসহ সর্বোচ্চ প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির কাছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববারের মধ্যে কমিশন সভা আহ্বান করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, প্রথমে ঢাকা সিটির তফসিল দেওয়া হতে পারে। পরে চট্টগ্রামের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, “কমিশন সভায় বসে কবে তফসিল দেব এবং একসঙ্গে করব, না কি আলাদা করবো তা পর্যালোচনা করা হবে। পরীক্ষার ফাঁকে কবে ভোট দিতে পারব, তা বুঝে তফসিল দেব।”
পদে থেকে প্রার্থী নয়
আইন অনুযায়ী লাভজনক পদে থেকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সুযোগ না থাকলেও আগাম প্রচারে সংসদ সদস্যদেরও দেখা যাচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, পদে থেকে মেয়ররাও নির্বাচন করতে পারেন না। পদত্যাগ করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
“সাংসদদেরও পদত্যাগ করতে হবে প্রার্থী হলে। তবে সিডিএ চেয়ারম্যান বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে স্বপদে থেকে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে স্থানীয় নির্বাচনে,” বলেন এক কর্মকর্তা।
প্রার্থী হতে হলে এবার সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই টিআইএন নম্বর দিতে হচ্ছে। মনোনয়নপত্রে এ সংক্রান্ত সংশোধনীও আনা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, মনোনয়নপত্রে টিআইএন নম্বর যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে মনোনয়নপত্র ছাপা হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর শিগগির নতুন মনোনয়নপত্র করা হবে। সেক্ষেত্রে সব প্রার্থীকে টিআইএন নম্বর দিতে হবে।
স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী ইসিতে ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদনও করেছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পর ভোটার এলাকা স্থানান্তরের সুযোগ নেই। এর আগে যারা আবেদন করেছে তাদের বিষয়ে কমিশন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে।