দুই মাস ধরে নিখোঁজ রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল গফুরকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার এক জন।
Published : 01 Mar 2015, 03:12 PM
জান্নাতুন সালমা মিম নামে ওই নারী নিজেকে গফুরের স্ত্রী দাবি করছেন। গফুরের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মিমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ।
পবা থানার ওসি মতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের দ্বিতীয় দিন শনিবার রাতে মেয়র গফুরকে হত্যার কথা স্বীকার করেন মিম।
“গত ৭ জানুয়ারি গফুরকে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে বলে মিম জানিয়েছে।”
১৬৪ ধারায় মিমের জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য মিমকে রাজশাহীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছে পুলিশ।
ওসি বলেন, “সংশ্লিষ্ট থানায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গিয়ে তার দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখার পর মিমকে আদালতে হাজির করা হবে।”
“কেন, কোথায় কিভাবে হত্যা করে লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে, আদালতে জবানবন্দি রেকর্ডের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানানো হবে,” বলেন ওসি।
গত শুক্রবার মিমের সঙ্গে তার দুই বোন জান্নাতুন নাইম ও জান্নাতুন ফেরদৌসকেও রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। রাজশাহী পুলিশ লাইনে রেখে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মিমের বাবার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। তার বিয়ে হয়েছে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা বোনারপাড়া গ্রামের এমাজ উদ্দিনের ছেলে হারুন অর রশিদের সঙ্গে।
হারুন ঢাকায় একটি ক্লিনিকে চাকরি করেন। কয়েক বছর আগে তিনি নওহাটায় সায়াগ্রাম নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন। ওই এনজিওর নামে একটি ক্লিনিক খুলে নিজেকে এমবিবিএস চিকিৎসক দাবি করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন হারুন।
দুই বছর আগে ওই এনজিও এবং ক্লিনিকটি তিনি গুটিয়ে নেন। এর পর নওগাঁ গিয়ে ‘সালমা ক্লিনিক’ নামে একটি ক্লিনিক খোলেন। মিম ও তার বোন জান্নাতুন নাইম ওই ক্লিনিক দেখা শোনা করতেন।
মেয়র গফুর ঠিক দুই মাস আগে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঢাকায় রওনা হন। ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তার সঙ্গে মোবাইলে পরিবারের যোগাযোগ ছিল। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।
তখন মেয়রের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা পারুল পবা থানায় একটি অপহরণ মামলা করলে পুলিশ তদন্তে নামে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পবা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬ জানুয়ারি থেকে বন্ধ থাকার পর ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি মেয়রের দুটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে তার ছেলের মোবাইলে দুটি এসএমএস আসে। ওই দুটি এসএমএসের একটিতে ২৫ হাজার টাকা এবং অন্যটিতে ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলা হয়।
“দীর্ঘদিন যোগাযোগবিছিন্ন থাকার পর এসএমএস করে বিকাশে টাকা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে ১৯ জানুয়ারি ফজিলাতুন্নেসা পারুল অপহরণ মামলা করেন। তখন আমরা তদন্ত শুরু করি।”
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে মেয়রের ফোন নাম্বারের অবস্থান ৭ জানুয়ারি নওগাঁ এবং তার পর থেকে ঢাকায় পাওয়া যায়।
“এর সূত্র ধরে গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকার সংসদ ভবন এলাকা থেকে মিমকে আট করা হয়। আটকের পর মিম মেয়রের স্ত্রী বলে দাবি করেন।”
এরপর ৩১ জানুয়ারি মিমের দুই বোন জান্নাতুন নাইম ও জান্নাতুন ফেরদৌসকে নওগাঁ ও ঢাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
তাদের আটকের পর আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে বিচারক মিমকে চার দিন এবং জান্নাতুন নাইম ও জান্নাতুন ফেরদৌসকে এক দিন রিমান্ডের আদেশ দেন।