এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মিলিত হয়েছেন ছাত্র-শিক্ষক, সাংস্কৃতিক-মানবধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতারা।
লেখক হুমায়ুন আজাদ ও ব্লগার রাজীব হায়দারকে হত্যার ধারাবাহিকতায় জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী বিজ্ঞানমনস্ক ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক অভিজিৎকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
অন্ধকারের এই শক্তির আঘাতের পাল্টা আঘাত দেওয়ার আওয়াজ তুলেছেন তারা।
‘আক্রান্ত মুক্তচিন্তা’ শিরোনামের ব্যানার নিয়ে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সমাবেশে হাজির হয়েছেন কয়েকশ ছাত্র-জনতা। অবিলম্বে অভিজিতের খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেন তারা।
সমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “অভিজিৎকে যখন হত্যা করা হয়েছে তখন রাত গভীর হয়নি। টিএসসির সামান্য দূরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হুমায়ুন আজাদকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেভাবে রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়। একইভাবে গতকাল অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে।”
জঙ্গিরাই এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “তাদের হত্যাকাণ্ডের ধরণ দেখে সাধারণ মানুষও বলতে পারবে একই জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।”
এই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুধু স্লোগান দিলে হবে না অভিজিতের ওপর আঘাতের প্রতিঘাত আমাদের দিতে হবে।”
অভিজিৎকে হত্যার জন্য সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দায়ী করে প্রবীণ রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছে। তারা শুধু যুদ্ধ ঘোষণাই নয়, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী দেশ করতে চায়, বাংলাস্তান করতে তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
টিএসসি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুদ কামাল।
তিনি বলেন, “কয়েক বছর আগে আজকের এই দিনে যখন হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করা হয় তখন ওই এলাকায় পুলিশ উপস্থিত ছিল। তাদের উপস্থিতিতে কিভাবে একজনকে হত্যা করা হয়েছিল তা আমার প্রশ্ন।
“গতকালও টিএসসি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ‘পাকিস্তানি রাষ্ট্র’ বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, খুশী কবির, মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস উপস্থিত রয়েছেন।
লেখালেখি নিয়ে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।
হামলায় তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অভিজিৎ ও বন্যার ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু বের করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি।
জঙ্গিগোষ্ঠীই এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে অভিজিতের পরিবার থেকে বলা হয়েছে।