‘জঙ্গিবাদীরাই অভিজিৎকে হত্যা করেছে’

ধর্মীয় উগ্রবাদীরাই লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে বলে মনে করছে তার পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2015, 04:25 AM
Updated : 27 Feb 2015, 11:41 AM

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।

মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত পরিচয়দের আসামি করা হয়েছে বলে শাহবাগ থানার এসআই সোহেল রানা জানিয়েছেন।

মামলা দায়েরের পর থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের অজয় রায় বলেন, “আমার ছেলেকে হত্যার জন্য উগ্র জঙ্গিবাদীরাই দায়ী। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত।”

বর্তমান সরকার খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিৎ, যিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লিখতেন।

লেখালেখি নিয়ে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গিবাদীরা।

হামলায় তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

অভিজিৎ ও বন্যার ওপর কারা হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু বের করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে দুটি চাপাতি পাওয়া গেছে।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একইভাবে চাপাতি দিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় জঙ্গিরা জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। 

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও রাজধানীর মিরপুরে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গিবাদীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।

অভিজিৎকে হত্যার পরেও অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উগ্রবাদীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ফারাবী শফিউর রহমানের নাম আলোচনায় এসেছে।

ফারাবী অভিজিৎকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন অভিযোগ করে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আসা একটি কমেন্ট শেয়ার করা হচ্ছে।

“অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাই তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে,” একজনকে উদ্দেশ করে ওই কমেন্টে বলা হয়েছে।

বাংলা বই বিক্রির ওয়েবসাইট ‘রকমারি ডটকম’ থেকে অভিজিৎ রায়ের বই সরাতেও হুমকি দিয়েছিলেন এর আগে হত্যাকাণ্ডে উসকানিদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার ফারাবী।

শাহবাগ আন্দোলনের মধ্যে ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর ফেইসবুকে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়ার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ফারাবীকে। পরে জামিনে ছাড়া পান তিনি।

এদিকে অভিজিৎকে হত্যার পর ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডকে ‘বিজয়’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে।

প্রথম টুইট করা হয়েছে রাত ১২টার দিকে, যাতে বলা হয়েছে, “আল্লাহু আকবর.. বাংলাদেশে আজ একটি বিশাল সাফল্য। টার্গেট ইজ ডাউন..”

পরের টুইটে অভিজিৎ ও তার স্ত্রীর একটি ছবি শেয়ার করে বলা হয়েছে, “ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অপরাধের’ জন্য ইসলামবিরোধী ব্লগার আমেরিকান বাঙালি অভিজিৎ রায়কে রাজধানী ঢাকায় হত্যা করা হয়েছে।”

হামলার পর মাটিতে লুটিয়ে থাকা অভিজিতের পাশে তার স্ত্রীর রক্তাক্ত একটি ছবি শেয়ার করে ‘এক্সক্লুসিভ!’ শিরোনামের এক টুইটে বলা হয়েছে, “এটা স্বামীর মাথা ধরে থাকা অভিজিৎ রায়ের রক্তাক্ত স্ত্রী। শিরোশ্ছেদ করা হয়েছে। গত তিন থেকে চার বছর ধরে সে শীর্ষ টার্গেটে ছিল।”

বিজ্ঞানমনস্ক অভিজিৎ লিখতেন ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর ছিল তার লেখা।

অভিজিৎ রায়ের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অবিশ্বাসের দর্শন, ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’, ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, স্বতন্ত্র ভাবনা : মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, সমকামিতা : বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান।