শিল্পকলার বিভিন্ন শাখায় অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ২০১৪ সালের ‘শিল্পকলা পদক’ পেলেন সাত গুণী।
Published : 19 Feb 2015, 04:51 PM
চারুকলায় সৈয়দ আবদুল্লাহ্ খালিদ, নৃত্যকলায় ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল, কণ্ঠসংগীতে পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী, যন্ত্রসংগীতে পণ্ডিত মদন গোপাল দাস, আবৃত্তিতে আশরাফুল আলম, নাট্যকলায় লাকী ইনাম ও ফটোগ্রাফিতে শহিদুল আলম এবার এ পদক পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বৃহস্পতিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে তাদের হাতে পদক তুলে দেন। পদকের সঙ্গে তারা পেয়েছেন এক লাখ টাকার চেক ও সনদ।
সংস্কৃতি সচিব রনজিৎ কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ খালিদ (চারুকলা)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপরাজেয় বাংলা’র ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ খালিদ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যূত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে মিলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নকশাও করেছিলেন তিনি।
১৯৪৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটে জন্ম নেওয়া আব্দুল্লাহ্ খালিদ ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় মাস্টার্স করার পর সেখানে শিক্ষকতাও করেন তিনি।
তার অন্য ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে রয়েছে টঙ্গীর ‘অংকুর’, চাঁদপুরের ‘অঙ্গীকার’ ও চট্টগ্রামের ‘ডলফিন’।
ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল (নৃত্যকলা)
রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে নৃত্য বিভাগের প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদলের জন্ম ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর, পশ্চিমবঙ্গে।
১১ বছর বয়স থেকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে নৃত্যের তালিম নেওয়া বাদল তারুণ্যে কুচবিহারের রাজার আমন্ত্রণে আসামে গিয়ে রাজ দরবারের জলসায় নৃত্য পরিবেশন করে প্রশংসিত হন। নাচের পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি।
তার অভিনীত নাটকগুলো হল- পথের শেষে, অভিযান, ইরানের রাণী, তিতুমীর, কংস, মাটির ঘর, সিরাজ-উদ-দৌলা, টিপু সুলতান, উল্কা ও আলীবাবা। এর মধ্যে অনেক নাটকেই তাকে দেখা গেছে নারী চরিত্রে।
পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী (কন্ঠসংগীত)
রাজশাহী বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী ‘সংগীতাশ্রম’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে তার তালিমে তৈরি হচ্ছে নতুন শিল্পীরা।
১৯২৮ সালে ফরিদপুর জেলায় অমরেশ রায় চৌধুরীর জন্ম। সংগীতে তার হাতেখড়ি হয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার সুধীর লাল চক্রবর্তীর কাছে। পরে হরিহর শুক্লা, নিখিলচন্দ্র সেন ও মানস চক্রবর্তীর কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের তালিম নিয়েছেন তিনি।
২০০০ সালে দিনাজপুরের প্রাচীনতম সংগীত প্রতিষ্ঠান নবরূপীর পক্ষ থেকে অমরেশ রায় চৌধুরীকে পণ্ডিত উপাধি দেওয়া হয়।
পণ্ডিত মদন গোপাল দাস (যন্ত্র সংগীত)
বাংলাদেশে তবলার প্রচার ও প্রসারে দীর্ঘদিনের চেষ্টার স্বীকৃতি হিসাবে পণ্ডিত মদন গোপাল দাসকে দেওয়া হয়েছে যন্ত্র সংগীত শাখায় শিল্পকলা পদক। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের যন্ত্রশিল্পী হিসাবে।
১৯৩৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্ম নেওয়া মদন গোপাল দাস তালিম নিয়েছেন উস্তাদ সাখাওয়াত হোসেন খাঁন, পণ্ডিত মিথুন দে, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ ও পণ্ডিত বারীন মজুমদারের মতো শিল্পীদের কাছে।
১৯৭৩ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সামনে আঙ্গুঁরবালা দেবী ও সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গানের সঙ্গে তবলা বাজিয়ে মদন গোপাল দাস প্রশংসিত হন।
তিনি ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন, নজরুল একাডেমি, খ্রিস্টান কালচারাল একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৬১ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৩ বছর খাদ্য বিভাগে সরাকারি চাকরি করার পর ১৯৯৪ সালে মদন গোপাল দাস অবসরে যান।
আশরাফুল আলম (আবৃত্তি)
আশরাফুল আলম যেদিন প্রথম মঞ্চে উঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেছিলেন, তখন তিনি রংপুর জেলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। একাত্তরে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’থেকে তার কণ্ঠের আবৃত্তিই মুক্তিযোদ্ধাদের যুগিয়েছে সাহস, অনুপ্রেরণা।
১৯৭২ সালে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক পদে। বেতারের পরিচালক হিসাবে ২০০৪ সালে তিনি অবসরে যান।
১৯৪৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রংপুরে জন্ম নেওয়া আশরাফুল আলম বিভিন্ন আবৃত্তি সংগঠন ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, উদীচী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আবৃত্তি কর্মশালার প্রশিক্ষক ও প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
লাকী ইনাম (নাট্যকলা)
মঞ্চ ও টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী লাকী ইনাম এবার নাট্যকলায় শিল্পকলা পদক পেয়েছেন।
১৯৭২ সালে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে লাকী ইনামের মঞ্চে পদার্পন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩৫টি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন, নিজে লিখেছেন বেশ কিছু নাটক।
মঞ্চের পাশাপাশি ১৯৭২ সাল থেকে তিনি টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন।
১৯৫২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রংপুরে জন্ম নেওয়া লাকী ইনাম গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশের সব সাংস্কৃতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে এসেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি নাট্যব্যক্তিত্ব ইনামুল হক এর স্ত্রী।
শহিদুল আলম (ফটোগ্রাফি)
আলোকচিত্র শিল্প নিয়ে কাজের জন্য শিল্পকলা পদক পাওয়া ড. শহিদুল আলম একইসঙ্গে একজন লেখক, শিক্ষক, কিউরেটর ও অধিকারকর্মী।
১৯৫৫ সালের ২ জুন ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা শহিদুল ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম আলোকচিত্র গ্রন্থাগার ‘দৃক’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে আলোকচিত্র শিক্ষার প্রতিষ্ঠান পাঠশালা, সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট।
শহিদুল আলমের তোলা ছবি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রদর্শীত ও প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ছবিমেলা ফেস্টিভালের পরিচালক এবং মেজরিটি ওয়ার্ল্ড আলোকচিত্র এজেন্সির চেয়ারম্যান।