মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানের ফাঁসির রায়ের পর আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে তার জেলা পাবনায়।
Published : 18 Feb 2015, 04:41 PM
মুক্তিযুদ্ধের নয়টি মাস এই পাবনাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও মুজাহিদ বাহিনীকে নিয়ে গ্রামে গ্রামে হত্যা, নির্যাতন লুটপাট চালিয়েছেন সুবহান, যিনি পরে এমপিও হয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বুধবার তার সর্বোচ্চ সাজার রায় দিলে রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস করেন মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ রায়ে পাবনাবাসী কলঙ্কমুক্ত হল। দীর্র্ঘদিন পরে হলেও কুখ্যাত রাজাকারের বিচার হওয়ায় আমরা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শহীদ পরিবার ও জনগণ খুশি।”
এ মামলার সাক্ষী শহিদুজ্জামান সেলিম জানান, ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালাতে চালাতে পাবনা শহরে ঢুকলে তার ভগ্নিপতি মোতলেব আহমেদ খান ও ভাগ্নে নাজমুলসহ প্রায় দুইশ লোক ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়। পরে মাওলানা সুবহান ও তার সহযোগীরা এসে মসজিদ থেকে বের করে মোতালেব, নাজমুলসহ ১৯ জনকে হত্যা করে।
সুবহানের বিরুদ্ধে যে ছয়টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে, তার মধ্যে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের এ ঘটনাসহ তিন অভিযোগে তার ফাঁসির রায় এসেছে।
মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফান্টুও এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। সর্বোচ্চ সাজার রায় আসায় তিনিও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পাবনা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য সুবহানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে। ১৯৫০ এর দশকে পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার হেড মাওলানা এবং আরিফপুরের উলট সিনিয়র মাদ্রাসার সুপারিন্টেডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শান্তি কমিটি গঠন করা হলে পাবনা জেলা কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পান সুবহান। পরে তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন।
তার ফাঁসির রায়ের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পাবনা শহরের বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউর রহিম লাল বলেন, “কুখ্যাত রাজাকারের ফাঁসির রায়ে পাবনার আপামর জনগণ খুশি হয়েছে। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি এ রায়কে স্বাগত জানাই।”
জেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, সুবহানের এই রায়ে সত্যিই পাবনাবাসী কলঙ্কমুক্ত হল।
পাবনার অন্যতম নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেলের সহ সভাপতি ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা এই রায়ে খুশি হয়েছি। দীর্র্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় আমরা আনন্দিত।”
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ শহরে আনন্দ মিছিল করে। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।
এদিকে রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির কর্মীরা পাবনা কলেজ গলিতে মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়।