আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়ে আপিলের যে কোনো রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
Published : 25 Nov 2014, 04:52 PM
জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিলেও সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে কমিয়ে এনেছেন তিনি।
আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা যাবে কি না, তা এতদিন ঝুলে ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায়।
রায় পুনর্বিবেচনায় কাদের মোল্লার আবেদন গ্রহণ করে শুনানি শেষে তা খারিজের আদেশ গত বছরের ডিসেম্বরে আপিল বিভাগ দিলেও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব মামলায় রিভিউ করা যাবে কি না, সংক্ষিপ্ত রায়ে তার কোনো উল্লেখ ছিল না।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ এবং রিভিউ আবেদন খারিজের পর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেও এরপর সম্প্রতি জামায়াতের আরেক নেতা মো. কামারুজ্জামানের চূড়ান্ত রায় হলে পুনরায় রিভিউয়ের বিষয়টি সামনে আসে।
অ্যাটর্নি জেনারেলসহ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা বলে আসছিলেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বিশেষভাবে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে হওয়ায় এক্ষেত্রে অন্যসব ক্ষেত্রে প্রচলিত রিভিউয়ের সুযোগ নেই।
তবে জামায়াত নেতাদের আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, রিভিউ সাংবিধানিক অধিকার এবং এই সুযোগ সবারই প্রাপ্য।
কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন করা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই মঙ্গলবার কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে।
এই রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য (মেনটেইনেবল) হবে। তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না।
সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় সন্তুষ্ট হননি জানালে রিভিউ করার বিষয়টি সামনে আনেননি অ্যাটর্নি জেনারেল কিংবা প্রসিকিউটরদের কেউ, যারা রিভিও চলবে না বলেই দাবি করে আসছিল।
এখন কাদের মোল্লার রিভিও সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ে সেই সুযোগ তৈরি হওয়ার পর তা নেওয়ার ইঙ্গিত সাংবাদিকদের দেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম।
তবে আপিল বিভাগের রায়ের পর সাঈদীর খালাস চেয়ে রিভিউ করার কথা বলেছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।
কাদের মোল্লার আপিলের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ হলেও সাঈদীরটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তা প্রকাশিত হলে বিচার-বিশ্লেষণ করে রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
আপিলের রায়ের পর প্রসিকিউশন ও আসামি উভয় পক্ষ রিভিউ আবেদনের সুযোগ পাবেন বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানান তিনি।
“উপাদান পাওয়া গেলে রিভিউ করা হবে,” সাঈদীর রায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন মাহবুবে আলম।
সাঈদীর রায় ‘আঁতাতের’ বলে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম তখন বলেছিলেন, এই রায় তারাও প্রত্যাশা করেননি।
২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, যার পরিপ্রেক্ষিত দেশজুড়ে জামায়াতের তাণ্ডবে নিহত হয় প্রায় একশ মানুষ।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল নিয়ে আপিল বিভাগে যান সাঈদী। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের রায়ে শাস্তি কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল।
আপিলের রায়ে ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১০ নম্বর অভিযোগের জন্য দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার ক্ষেত্রে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে যুদ্ধাপরাধের মামলার ক্ষেত্রে রিভিউ চলবে না বলে মত জানিয়েছিলেন মাহবুবে আলম। এই অনুচ্ছেদ অনুসারে যুদ্ধাপরাধীদের সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সুযোগ রহিত করা হয়েছে।
তবে আপিল বিভাগ তাদের অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে যুদ্ধাপরাধ মামলায় রিভিউর এই সুযোগ দিল।
এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামিদের আইনজীবীদের দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটল।
এর ফলে কামারুজ্জামানও তার ফাঁসির আদেশ রিভিউয়ের আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। গত ৩ নভেম্বর তার আপিলের রায় হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি।