বেনাপোলে ‘ফরমালিন’ পরীক্ষা হয় না

বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা ফল ও খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষার অফিস ও লোকবল থাকলেও যন্ত্রপাতির অভাবে তা করা হয় না।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 03:26 PM
Updated : 24 Nov 2014, 03:26 PM

ফলে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এ রাসায়নিকের পরীক্ষা ছাড়াই চেক পোস্ট পার হয়ে ফলসহ নানা খাদ্যদ্রব্য বাজারে চলে আসছে।

এ স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে শতাধিক ট্রাক পেঁয়াজ, রসুন, পান, মরিচ, আদা ও গমসহ বিভিন্ন পচনশীল খাদ্যদ্রব্য আমদানি হচ্ছে।

এসব পণ্য খাওয়ার উপযোগী কিনা তা পরীক্ষার জন্য বেনাপোল চেক পোস্টে ‘উদ্ভিদ সংগনিরোধ’ নামের একটি অফিস রয়েছে। সেখান থেকে নামমাত্র পরীক্ষার পর ‘চালানপত্র’ দিয়ে আমদানি হওয়া খাদ্যদ্রব্য খালাসের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু এসব খাদ্যে ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষার কোনো যন্ত্রপাতি তাদের নেই।

ভারত থেকে আসা ফলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক এম এ ওয়াজেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভারত থেকে আসা খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন থাকার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে, কিন্তু ফরমালিন পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এখানে নেই।

“বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত এসব যন্ত্রপাতি আমরা হাতে পাইনি।

“আমদানি হওয়া খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষা ছাড়াই পণ্য চালান খালাসের অনুমতিপত্র দেওয়া হচ্ছে।”

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বিস্কুট, চকলেটসহ নানাবিধ খাদ্যদ্রব্য এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক আমদানি হচ্ছে, কিন্তু এসব পণ্যের মান পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই বন্দরে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, কেমিক্যাল টেস্টের জন্য সাত বছর আগে বেনাপোল শুল্ক ভবনে একটি ল্যাবরেটরি ভবন তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু সেখানে যন্ত্রপাতি না থাকায় গত বছর থেকে এ ভবনটি রাজস্ব কর্মকর্তারা অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছেন।

বেনাপোল শুল্ক ভবনের ল্যাবরেটরিতে পণ্যের মান পরীক্ষার কার্যক্রম চালুর দাবি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে আসলেও তা আমলে নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।

ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হচ্ছে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের, বলেন মশিয়ার রহমান।

সমস্যার কথা স্বীকার করে বেনাপোল শুল্ক ভবনের কমিশনার মাহাবুবুজ্জামান বলেন, “আমরা সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যখন বৈঠকে বসেছি প্রতিবারই এই সমস্যার কথা তুলে ধরেছি। এসময় সমস্যা সমাধানে আমাদের আশ্বাসও দেওয়া হয়, কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি।”

বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার দ্রুত বেনাপোল বন্দরে ল্যাবরেটরি ভবন তৈরি করে এ সমস্যার সমাধান করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সোমবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাই কোর্ট রেঞ্চ খাদ্য ও ফলে ফরমালিনের উপস্থিত মাপার যন্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে আদেশ দিয়েছে সরকারকে।

আদেশে ফরমালিন মাপার সঠিক যন্ত্র নির্বাচন করার জন্য আগামী ৭ দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, খাদ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

এই কমিটিতে বিসিএসআইআর, বিএসটিআই, এনএফএসএল, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন।