ফরমালিন: নতুন যন্ত্র সংগ্রহের নির্দেশ

সাত দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে খাদ্য ও ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি মাপার সঠিক যন্ত্র সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 08:17 AM
Updated : 24 Nov 2014, 08:17 AM

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। সরকারের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আওসাফুর রহমান।

ফরমালিন মাপার সঠিক যন্ত্র নির্বাচন করায় জন্য আগামী ৭দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। স্বাস্থ্য সচিব, খাদ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

এই কমিটিতে বিসিএসআইআর, বিএসটিআই, এনএফএসএল, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

ওই কমিটি দেশের বাজারে ফরমালিন মাপার জন্য যে যন্ত্রকে সঠিক বলে মনে করবেন, বিবাদীদের তা সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিটি গঠনের পর নির্বাচন ও সংগ্রহে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছে আদালত।

এই যন্ত্র সংগ্রহে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট।

‘বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর সভাপতি সাধন চন্দ্র দাশ ও সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম গত ১৩ জুলাই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি পর গত ২১ জুলাই বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. হাবিবুল গণির বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেয়।

আদেশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরোটরির পরিচালককে ওই যন্ত্র পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে যে যন্ত্র দিয়ে তা আসলে তৈরি করা হয়েছে বাতাসে ফরমালিন পরীক্ষার জন্য।

প্রস্তুতকারক কোম্পানির ব্যবহারবিধি ও ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর নামের এক কোম্পানির তৈরি করা ‘জেড ৩০০’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড ভ্যাপর মিটার’ যন্ত্রটি পরিবেশ ও বাতাসে ফরমালডিহাইডের বাস্প মাপার ‘সংবেদনশীল’ যন্ত্র। এর মাধ্যমে বাতাসে ফরমালডিহাইড গ্যাসের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

আর বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফলসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ব্যবহৃত যন্ত্র নির্ভুল তথ্য দেয় না।

বিএসটিআই জানায়, ডিএমপির ব্যবহৃত ‘জেড ৩০০’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড মিটার’ দিয়ে বাজার থেকে সংগৃহীত আপেল, আঙ্গুর, কলা, খেজুর, কমলা, আম ও মাল্টা পরীক্ষায় তারা ফরমালিনের উপস্থিতি পেয়েছেন। অথচ একই ফল বিএসটিআই ল্যাবের নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষায় শুধু আমে ফরমালিন পাওয়া গেছে।

ফর্মালিন হলো ফর্মালডিহাইডের একটি জলীয় দ্রবণ যা টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, কাগজ ও রঙ শিল্প এবং মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এই দ্রবণ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছ,শাকসবজি ও ফল দীর্ঘ সময় তাজা দেখাতে ফরমালিন ব্যবহার করেন।

এই মামলার শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, “ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ জঘন্য অপরাধ এবং তা বন্ধ করা প্রয়োজন। কিন্তু এই সুযোগে যদি সঠিক যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ফরমালিন পাওয়ার অজুহাতে হাজার হাজার টন ফল ধ্বংস করা হয়, তা ব্যবসায়ী, কৃষি ও ভোক্তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। যেহেতু যন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, তাই এর পরীক্ষা করা প্রয়োজন।”

এর আগে একটি মামলার রায়ে ফল পাকাতে এবং তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় হাই কোর্ট।

ওই রায়ে বলা হয়, ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্র বন্দরে `কেমিকাল টেস্ট ইউনিট' স্থাপন করতে হবে, যাতে আমদানি করা ফল রাসায়নিক পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হয় এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো কোনো ফল দেশের প্রবেশ না করতে পারে।

এছাড়া রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে কেউ যাতে ফল বিক্রি করতে না পারে সেজন্য কমিটি করে সারা বছর সব ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগারে পর‌্যবেক্ষণ চালানোরও নির্দেশ দেয়া হয়।