শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজ শুরু করতে পারেনি ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি।
Published : 24 Nov 2014, 05:09 PM
কমিটির একজন সদস্য আকস্মিকভাবে বিদেশ সফরে যাওয়ায় কবে নাগাদ তদন্ত শুরু করা যাবে তাও বলতে পারছেন না কমিটির প্রধান গণিত বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস।
আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে একজন নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও বোমাবাজিতে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। নিহত সুমন চন্দ্র দাস সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র।
সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে ওই দিনই অধ্যাপক ইলিয়াসকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনুছ ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়ার সঙ্গে রোববার সকালে ভারতে গেছেন অধ্যাপক নজরুল। উপাচার্যের সফর পাঁচ দিনের হলেও নজরুল ইসলাম কবে ফিরবেন সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি কমিটির প্রধান।
তদন্ত কমিটির কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে সোমবার দুপুরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো গতকাল থেকেই কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কমিটির একজন সদস্য হঠাৎ করে বিদেশ সফরে গেছেন।
“সোমবার আমি একটি মিটিং ডেকেছিলাম, উনার অনুপস্থিতিতে আমাকে তা স্থগিত করতে করতে হয়েছে।”
“তার বিদেশযাত্রা সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানোও হয়নি”, বলেন গণিতের এই শিক্ষক।
কবে নাগাদ তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করতে পারবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইলিয়াস বলেন, “একজন সদস্যের অনুপস্থিতিতে তো আর আমি কাজ শুরু করতে পারব না। তাই আমি কমিটির অন্য সদস্যের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি উনি দেশে ফিরলে কাজ শুরু করব।”
এদিকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সময়ে দায়িত্বশীল দুইজনের আকস্মিক বিদেশ সফর নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সরকার সমর্থিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সামসুল আলম বলেন, “উপাচার্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে শাবিতে উপাচার্য হয়েছেন। তাই তার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো আন্তরিকতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলবে, তা নিয়েও তার কোনো মাথাব্যথা নেই।”
উপাচার্য ও তদন্ত কমিটির সদস্যের এই ভূমিকায় ‘বিস্মিত’ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকরাও, যারা ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকবৃন্দ’র ব্যানারে সক্রিয়।
এই পক্ষের নেতা অধ্যাপক সাজেদুল করিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ, আবার ভর্তি কার্যক্রমও চলবে, তদন্ত কমিটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। অথচ এমন সময় ভিসির বিদেশ সফরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার স্তম্ভিত।”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ মোহাম্মদ ফারুক উদ্দীন বলেন, “স্যারকে আমরা বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম যে এটা একটা সঙ্কটময় পরিস্থিতি। এসময় তিনি না গেলেও পারতেন।”
তবে শনিবার রাতে উপাচার্য আমিনুল হক ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, সবকিছু মোকাবেলা করে ক্যাম্পাস সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের পর পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় আড়াইশজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে। এর আগে সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে আটক এবং ছাত্রলীগের এক নেতার বাড়ি থেকে রিভলবার ও রামদা জব্দ করা হয়।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে অতিরিক্ত পুলিশ চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্র্রাপ্ত নিবন্ধক জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে।
ভর্তি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।