বিমান চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে সংসদে ওয়াক আউট

সোনা চোরাচালানের ঘটনায় বিমানের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীনকে অপসারণের দাবিতে ওয়াক আউট করেছে জাতীয় পার্টি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 01:43 PM
Updated : 22 Dec 2014, 03:52 PM

রোববার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাতের পর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিতে অব্যবস্থাপনার জন্য চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীনকে দায়ী করে তার অপসারণ চান বিরোধী দলের সদস্যরা।

আলোচনার এক পর্যায়ে কাজী ফিরোজ রশীদ অধিবেশন পরিচালনাকারী ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মাধ্যমে মন্ত্রীর কাছে জানতে চান- বিমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হবে কি না?

এসময় ডেপুটি স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী নোটিস দিতে জাতীয় পাটির সংসদ সদস্যকে পরামর্শ দিয়ে কথা বলার সুযোগ দেন জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদলকে।

তখন বিরোধী দলের সদস্যরা ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন। এটা বিএনপিবিহীন দশম সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দ্বিতীয় ওয়াক আউট।

রোববার ওয়াক আউটের সময় বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে ছিলেন না। তবে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

বেসামরিক বিমান চলাচলমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। অধিবেশন কক্ষে ওই সময় ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওয়াক আউটের পাঁচ মিনিটের মধ্যে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা পুনরায় অধিবেশন কক্ষে ফেরেন।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের সঙ্গে একই দাবিতে স্বতন্ত্র সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকীও দুই মিনিটেরর জন্য ওয়াক আউট করেন।

গত এক বছরজুড়ে বিমানবন্দরে চোরাই সোনার অসংখ্য চালান আটকের পর গত ১৮ নভেম্বর চোরাচালানে জড়িত অভিযোগে বিমানের এক উপমহাব্যবস্থাপকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বিমান বন্দরে আটক চোরাই সোনা (ফাইল ছবি)

সোনা চোরাচালানে বিমান কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য মেলার পর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই সংস্থার চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে সংসদে সরব হয়েছিলেন ফিরোজ রশীদ।   

রোববার পুনরায় সংসদ অধিবেশনে একই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।

নবম সংসদের বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে জামাল উদ্দীনকে ‘চোর’ বলা হয়েছিল বলে দাবি করেন ফিরোজ রশীদ।

তিনি বলেন, “নবম সংসদের বিমান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে কী ছিল? এখনো আমরা তার কোনো কপি পাইনি? কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।”

ফিরোজ রশীদ বলেন, “ওই কমিটির সুপারিশ ছিল- চেয়ারম্যানসহ পুরো পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার। তার অ্যাকশন দেখি না।

“বিমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। তিনজন মন্ত্রী পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু চেয়ারম্যান চেঞ্জ হয়নি।  জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের এ দৈন্য দশা মেনে নেওয়া যায় না।”

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে ফিরোজ বলেন, “বিমান চেয়ারম্যানকে অপসারণ করবেন কি না? মন্ত্রী যদি তাকে যদি অপসারণ না করেন তাহলে আমরা ওয়াক আউট করতে বাধ্য হব। মন্ত্রী যদি আমাদের আশ্বস্ত করেন, তাহলে থাকব। না হলে আমরা ওয়াক আউট করব।”

তখন ডেপুটি স্পিকার বলেন, “এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। পয়েণ্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ঢালাও বক্তব্য দিলে কোনো সুরাহা হবে না।”

বিমানের চলমান বিষয়ে কতক্ষণ আলোচনা করতে চান, সে বিষয়ে কার্যপ্রণালী বিধি মেনে নোটিস দিতে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যকে পরামর্শ দেন ফজলে রাব্বী।

এরপর মাগরিবের বিরতি হয়ে যায় সংসেদে। বিরতির পর মঈন উদ্দিন খান বাদলকে মাইক দেওয়া হলে ৬টা ১০ মিনিটে বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াক আউট করেন।

বিরোধী দলের মতো ক্ষমতাসীন জোটের নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলও বিমানে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নবম সংসদে বিমানের দুনীতি তদন্তে তার নেতৃত্বে গঠিত সংসদীয় কমিটি প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “৬ মাস ধরে তদন্ত করে বিমানের দুর্নীতির বিষয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে সংসদে উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে দেখিনি।

“এমনটাই যদি হয়, তাহলে সংসদীয় কমিটির রিপোর্টের দরকার কী? দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র যদি চালু থাকে, তাহলে তার নমুনা দেখাতে হবে।”

বিমানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানান বাদল।

এদিকে বিমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে ৩০০ বিধিতে সংসদে বিবৃতি দাবি করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম।