সোনা চোরাচালান: নজরদারিতে অর্ধ শতাধিক কর্মকর্তা

সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর আরো অর্ধশত কর্মকর্তার ওপর এখন চলছে গোয়েন্দা নজরদারি।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 04:53 PM
Updated : 20 Nov 2014, 05:40 PM

বুধবার পাঁচজনকে আটকের পর পুলিশ বলছিল যে এই চোরাচালান চক্রে বিমান কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিমানবালা পর্যন্ত আরো অনেকে জড়িত বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার ওপর ‘বিশেষ নজরদারির’ পরিকল্পনা নিয়েছেন গোয়েন্দারা।

“তাদের গতিবিধি বিশেষ পরিবীক্ষণে রাখা হচ্ছে,” বলেন তিনি। তবে ‘তদন্তের স্বার্থে’ এই কর্মকর্তাদের নাম বলতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

“নজরদারিতে থাকবেন- এমন কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ পেলে গোয়েন্দা তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার একটি সুযোগও তৈরি হয়।”

শাহজালাল বিমানবন্দরে গত এক বছর ধরেই সোনার চালান আটক হচ্ছিল। এতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগও উঠছিল।

এর মধ্যে মঙ্গলবার বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)  এমদাদ হোসেনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। অন্যরা হলেন- বিমানের প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেন, উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদ এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়।

বিমান বন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মঈনুল খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ বছরের শুরুতে এনবিআর বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

“তদন্ত প্রতিবেদনে বিমানের বিভিন্ন স্তরের ১৪ জন কর্মকর্তার নাম উঠে আসে। প্রতিবেদনটি এনবিআরে জমা দেওয়া আছে।”

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, চিহ্নিত ১৪ জনকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানের মূল হোতারা বের হয়ে আসবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ পুলিশকে সেই প্রতিবেদন দিতে পারবে। 

শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মঈনুল বলেন, গত ১৪ মাসে বিমানবন্দরে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ৬৭৭ কেজি সোনা উদ্ধার করে ৮৮ জনকে আটক করেছে। এদের একটি অংশ বিমান ও সিভিল এভিয়েশনে কর্মরত ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, “এক সময় লোকজন ধারণা করত, বিমানের কর্মচারীরাই কেবল সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। তারা মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের সঙ্গে মিলে বিমানবন্দর থেকে সোনা পাচার করে।

“তবে এখন সেটি ভাবার সুযোগ নেই। গোয়েন্দারা এবার উচ্চ পর্যায়ের অপরাধীদের ধরার চেষ্টায় অভিযান চালাবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের এক সহকারী কমিশনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আটকদের অনেকের নাম লোকমুখে শোনা গেলেও তাদের আটক করার মতো তথ্য হয়ত ছিল না অথবা উচ্চ পর্যায়ের কাউকে আটক করলে তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে আশঙ্কাও ছিল।”

তবে চোরাচালানেস যারাই জড়িত কারোরই পার পাওয়ার উপায় এখন নেই, বলেন মাসুদুর।

বিমানবন্দর থানার ওসি শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত এক বছরে বিমানবন্দরে সোনা চোরাচালানের অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় ৯৫টি মামলা হয়েছে। আটক হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

আটকদের মধ্যে বিমানের কর্মী, টেকনিশিয়ান, ক্রুসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন।

প্রতি মাসে সোনা চোরাচালানের ঘটনায় অন্তত ১০টি মামলা হচ্ছে জানিয়ে ওসি বলেন, “এক সময় সোনা চোরাচালানের ঘটনায় মাসে এক-দুটি মামলা হত। তখন আটক যেমন কম হতো, এখন তেমনটা না।”

গ্রেপ্তার পাঁচজনের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া গেছে কি না- জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আশা করছি, চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।”