রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম (৪৮) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক।
Published : 15 Nov 2014, 04:25 PM
ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এম তাহের হত্যাকাণ্ডের আট বছরের মধ্যে খুন হলেন অধ্যাপক শফিউল। ২০০৬ সালে তাহেরকে ক্যাম্পাসে তার বাসায় হত্যা করা হয়েছিল।
শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকার বাসায় ফিরছিলেন অধ্যাপক শফিউল। পথে বিহাস পল্লীতে তিনি হামলার শিকার হন বলে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
গুরুতর অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যেই এই শিক্ষকের মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানান।
হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের নিবন্ধক ডা. মমতাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই শিক্ষকের মাথা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পরপরই তিনি মারা যান।”
কারা, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ৩টার দিকে শফিউল ইসলাম বিহাসের পাশের রাস্তা দিয়ে মোটর সাইকেলে চৌদ্দপাই যাওয়ার সময় হঠাৎ কয়েকজন তাকে ঘিরে ফেলে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়।
মাথা ও ঘাড়ে রক্তক্ষরণের মধ্যেই শফিউল একটি রিকশায় চেপে হাসপাতালের পথে রওনা হয়েছিলেন। ক্যাম্পাসলাগোয়া বিনোদপুরে এসে তিনি রিকশা থেকে পড়ে যান।
এসময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন তাকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ওসি আলমগীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি। তাদের সনাক্ত করে আটকের চেষ্টা চলছে।”
যেখানে অধ্যাপক শফিউলের ওপর হামলা হয়েছিল, সেখান থেকে র্যাব একটি চাপাতি উদ্ধার করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অধ্যাপক শফিউলের জানাজা হয়। এতে উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দিনসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শিক্ষক খুনের প্রতিবাদ এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিকালে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রোববার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
গাইবান্ধার বাসিন্দা অধ্যাপক শফিউল ইসলাম লিলন বাউল সাধক লালনের ভক্ত ছিলেন। তার একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েন।
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহেরকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার ক্যাম্পাসের বাসায় হত্যা করা হয়। তার লাশ বাসার পাশের ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
ওই হত্যাকাণ্ডের দায়ে অধ্যাপক তাহেরের বিভাগের শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিন, বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলমের পাশাপাশি আব্দুস সালাম ও নাজমুল নামে আরো দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল বিচারিক আদালত।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে সালাম ও নাজমুলের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
এর আগে ২০০৪ সালে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর গ্রামে খুন হয়েছিলেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনূস আলী। তাকে হত্যার দায়ে দুই জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড হয়।