ঋণ কেলেঙ্কারি, সুড়ঙ্গ কেটে টাকা চুরির পর এবার অর্ধশতাধিক চেক খোয়া যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সোনালী ব্যাংকের ঢাকার একটি শাখায়।
Published : 27 Oct 2014, 05:50 PM
রাষ্ট্রায়ত্ত সর্ববৃহৎ এই বাণিজ্যিক ব্যাংকের লালমাটিয়া শাখা এই ঘটনা জানিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।
রোববার দুপুরে ব্যাংকের ক্লিয়ারিং সেকশনের ড্রয়ার থেকে এসব চেক চুরি যায় বলে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক পুলিশকে জানিয়েছেন।
মোহাম্মাদপুর থানার ওসি আজিজুল হক সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোনালী ব্যাংকের লালমাটিয়া শাখা অর্ধশতাধিক চেক হারানো গেছে বলে একটি অভিযোগ করেছে, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি।”
ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসব চেক অন্য ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকেরই অন্য শাখা থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য জমা দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে কোটি টাকার অঙ্ক হবে এই সব চেকের।
শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম খান অবশ্য দাবি করেছেন, চেকগুলোতে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
তবে শাখার কাছে এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট হিসেব নেই বলে স্বীকার করেন তিনি।
“তবে তা কোনওভাবেই কোটি টাকা হবে না, কারণ আমার ব্রাঞ্চে প্রতিদিনের গড় লেনদেন এক থেকে দেড় কোটি টাকা,” বলেন রেজাউল।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হারানো চেকগুলোর মধ্যে কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতনের চেক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বেতন হয় ওই শাখার একাউন্টে। ২৬ অক্টোবর সরকারি অফিস থেকে বেতনের চেক এসেছে। কিন্তু তা হারিয়ে যাওয়ায় ডুপ্লিকেট না পাওয়া পর্যন্ত ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেতন জমা হচ্ছে না।
এছাড়া পাটকল কর্পোরেশনের টেন্ডারে অংশ নেওয়া ঠিকাদারদের পে-অর্ডারও ছিল বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান।
লালমাটিয়া শাখা নিয়ন্ত্রণকারী সোনালী ব্যাংকের রমনা অঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৫০ থেকে ৫৫টি চেক হারানো গেছে। এর মধ্যে ৪০টি চেকের ইরফরমেশন আছে। বাকিগুলো লেজারে তোলার আগেই চুরি গেছে।”
এদিকে এরই মধ্যে হারানো ওই চেক ভাঙ্গিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
রোববারই রাজধানীর গুলশানে স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে লালমাটিয়া শাখা থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি চেক জমা দিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা হয় বলে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
“স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে চেক প্রদানকারীকে ফোন করলে পালিয়ে যায় চেক জমা দেওয়া ওই ব্যক্তি। পরে জানা যায়, ওই চেকটি লালমাটিয়া শাখা থেকে চুরি করা,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
উপ মহাব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান বলেন, “যেসব চেকের তথ্য আছে সেগুলোর পেমেন্ট স্টপ করার জন্য আমরা গ্রাহকদের বলেছি। গ্রাহকরা যার যার ব্যাংকে বলে পেমেন্ট স্টপ করেছে। আর যেগুলো লেজারে নেই সেগুলোর তথ্য বের করে পেমেন্ট স্টপ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, কোনও গ্রাহক এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।”
“পুলিশ এগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা চেক জমা নেওয়া, ক্লিয়ারিং ইত্যাদি কাজের সাথে সম্পৃক্ত, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে,” বলেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন এই ব্যাংকের একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটার পর নিরাপত্তা বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যেই লালমাটিয়া শাখার এই ঘটনা ঘটল।
এর আগে ফ্যানফোল্ড ভাউচার জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংকের ঢাকার মিরপুর শাখা থেকে ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র, যা আর ব্যাংক উদ্ধার করতে পারেনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে ধরা পড়েছে, সোনালী ব্যাংকের শিল্প মন্ত্রণালয় শাখার জাহিদুল ইসলাম নামে এক কর্মকর্তা ভুয়া হিসাব খুলে বিভিন্ন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে ও ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চিঠি দিয়ে এ ধরনের কর্মকর্তাদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।