বর্ধমানের একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সব তথ্য ক্রমানুসারে সাজানো এবং জোগাড় করে বাংলাদেশকে দিতে সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলোকে বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
Published : 11 Oct 2014, 11:04 PM
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক একটি চিঠি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
“... এবং আমরা এ বিষয়ে আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে ক্রমানুযায়ী তথ্য সাজাতে এবং জোগাড় করতে অনুরোধ করেছি, যাতে বাংলাদেশ যে তথ্য চাইছে সেটি যথাযথভাবে দিতে পারি।”
এদিকে ওই বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য আসামের বারপেটা জেলা থেকে ছয় ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানিয়েছে ভারতের পুলিশ।
গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে শামীম ওরফে শাকিল আহমেদ এবং স্বপন ওরফে সুবহান মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তি নিহত হন, যারা জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর একটি শাখার সদস্য ছিল বলে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে।
বিস্ফোরণের পরে সেখান থেকে আমিনা বিবি ও রাজিরা বিবি নামে জঙ্গিবাদে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তান প্রদেশের একটি ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের দাবি।
ওই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) ও আল জিহাদের সম্পৃক্ততায় গড়ে ওঠা ‘আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক’র বিষয়ে তথ্য বেরিয়ে আসে।
ফলে বিষয়টির তদন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হাত থেকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে (এনআইএ) দেওয়ার পক্ষে মত দেয় ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)।
কেননা, পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন মমতা বন্দোপ্যাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী ও জঙ্গিদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে বামফ্রন্ট ও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।
আসাম পুলিশের মহাপরিদর্শক এসএন সিং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বর্ধমানে বিস্ফোরণে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছেন বারপেটা জেলা থেকে।
“তারা জেএমবি'র সদস্য। আল কায়দার সঙ্গে তাদের সংযোগের বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়। কিন্তু তারা বাংলাদেশের নিষিদ্ধ মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।”
গ্রেপ্তাররা হলেন, রফিকুল ইসলাম (৩৯), সিরাজ আলী খান (৫৩) ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০), জহরউদ্দিন (৬০), গোলাম ওসমানি (২৩) ও সারবেশ আলী (৩৫)।
পুলিশ জানায়, বারপেটার একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তাদেরকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়হিরি আসামে সংগঠনটির শাখা খোলার নির্দেশনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তাররা উগ্র ইসলামপন্থি সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টার সঙ্গে জড়িত ছিল কি না সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এসএন সিং বলেন, মামলাটির স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে গোহাটির একটি আদালত গ্রেপ্তারদের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আসাম পুলিশ তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য আদায় করতে এনআইএ'র হাতে সোপর্দ করবে।
ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ধমানের বিস্ফোরণের পর গ্রেপ্তার দুই নারীর একজন নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়েছেন, তারা গত তিন মাসে চার দফায় ‘কাউসার’ ও ‘রাসিক’ নামে দুই বাহকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বোমা পাঠিয়েছেন। ওই দিনও বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য বোমা বানাতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটে।
আসাম পুলিশ সূত্র বলছে, সেখান থেকে গ্রেপ্তার ছয়জন ভারত এবং বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে বোমা তৈরির কাজে জড়িত ছিল।
বিস্ফোরণের ঘটনার জের ধরে ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করে ভারত। আসাম থেকে ওই ছয় জেএমবি সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজ্য সীমান্তে আরেক দফা নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।