রাখাইনদের অধিকার রক্ষায় ১৩ দাবি

বরগুনা ও পটুয়াখালীতে রাখাইন সম্প্রদায়ের দখল হয়ে যাওয়া ভূমি, ধর্মীয় উপাসনালয় ও শ্মশান দখলমুক্ত করাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে একটি নাগরিক প্রতিনিধি দল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2014, 02:28 PM
Updated : 22 Sept 2014, 02:28 PM

দুই জেলায় রাখাইনদের পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১২ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিনিধি দল রাখাইন অধ্যুষিত বরগুনার তালতলি ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া সফর করে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, “আদিবাসীদের অবস্থা দিনদিন খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে দায়িত্বের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিলুপ্ত প্রায় রাখাইনসহ বাংলাদেশের আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানো এবং আদিবাসীদের দুঃখ-দুদর্শার চিত্র জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনতে হবে।”

মূল বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল। বর্তমানে সেখানে যথাক্রমে ২৬ ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে।

“কতটা অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন ও ভূমিদস্যুতার শিকার হলে মানুষের সংখ্যা এমনভাবে কমে যায় এটি তারই দালিলিক প্রমাণ।”

তিনি জানান, শতাব্দী প্রাচীন কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহারের ৯৯ শতাংশ জমির অধিকাংশ দখল হয়ে গেছে। দখলদারীর ভূমিকা থেকে স্থানীয় প্রশাসনও বাদ যায়নি, স্থানীয় পৌরভবনের প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের জন্য বৌদ্ধ বিহারের জায়গা দখল করা হয়েছে।

“১৯০৬ সালে এ এলাকায় ১৯টি বৌদ্ধ মন্দির ও বিহার ছিল, সেখানে আজ ১টি মন্দির কোনোভাবে টিকে আছে। চুরি হয়ে গেছে বুদ্ধের পিতল, পাথর, কাঠ ও চুনাপাথরে নির্মিত মূর্তি।

”প্রতিনিধি দলের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে রাখাইনদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, পটুয়াখালী ও বড়গুনার স্থানীয় সরকারে রাখাইন জনগণের প্রতিনধিত্ব নিশ্চিত করা, এ সম্প্রদায়ের শিশুদের  প্রাথমিক পর্যায়ে রাখাইন ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু, রাখাইন তাঁতশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, মৃতদেহ সৎকারের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দীপায়ন খীসা, কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষক অনুরাগ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ।

দক্ষিণাঞ্চলের এই দুই জেলায় রাখাইন সম্প্রদায়ের ওপর দখলদারদের নির্যা‌তনের চিত্র তুলে ধরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে দুই জেলার শতাব্দী প্রাচীন রাখাইনরা সম্প্রদায়ের লোকজন ভিটেমাটি ছেড়ে অনত্র চলে যাচ্ছে।