মিরপুরের কালশীতে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগে ১০ জন নিহত হওয়ার পর আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশের করা হত্যা মামলায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হননি।
Published : 29 Aug 2014, 08:09 PM
ঘটনার সময় মোবাইল ফোনে তোলা বেশকিছু ভিডিও হাতে পেলেও সেসব থেকে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে ঘটনার পর পল্লবী থানায় দায়ের করা বাকি পাঁচটি মামলা এবং এসব মামলার আসামিদের নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা।
ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দাবি, সবকটি মামলায় তাদের গোষ্ঠীর লোকজনকে আসামি করা হলেও তারা কিছুই জানে না। এমনকি অন্তত তিনটি মামলা কারা করেছে সে সম্পর্কেও তাদের কোনো ধারণা নেই।
আতশবাজি পোড়ানোকে কেন্দ্র করে গত ১৪ জুন ভোরে কালশীর ওই ক্যাম্পে সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হন। সংঘর্ষের সময় কয়েকটি ঘরে আগুন দেয়া হলে পুড়ে মারা যান নয়জন, যারা একই পরিবারের সদস্য। এছাড়া পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরো একজন নিহত হন।
ওই ঘটনায় পল্লবী থানায় হত্যা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগে ছয়টি মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি মামলার বাদী থানার এসআই মমিনুর রহমান ও জাহিদুল ইসলাম।
বাকি পাঁচ মামলার বিষয়ে পল্লবী থানার ওসি সৈয়দ জিয়াউজ্জামান বলেন, “বিহারি ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় হয়েছে তিনটি মামলা, আর বাকি তিনটি হয়েছে মিরপুর-১১ এবং প্যারিস রোডে মারামারির ঘটনায়।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এসব মামলার তদন্ত করায় তাদের কাছেই সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য রয়েছে বলে জানান তিনি।
পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে এসআই মমিনুর রহমানের করা মামলায় (মামলা নম্বর ৩২) অজ্ঞাত পরিচয় এক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত করছেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে নিবারণ চন্দ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ মোবাইল ফোনে তোলা ওই ঘটনার বহু ভিডিও ও ছবি পেয়েছে। হামলায় আহত আসলাম, ইয়াসিন ও ফারজানার কাছ থেকে ঘটনার বিবরণও নেয়া হয়েছে। তবে হামলাকারীদের কাউকে চিহ্নিত করা বা আটক করা যায়নি।”
ওই ঘটনায় আহত ইয়াসিন অবশ্য দাবি করেছেন, পুলিশ তার কোনো ভাষ্য নেয়নি। সেই রাতে পরিবারের নয় সদস্যকে হারিয়েছেন ইয়াসিন।
এই পরিস্থিতিতে মামলার তদন্ত কবে নাগাদ শেষ হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
এদিকে এসব মামলায় ক্যাম্পের বাসিন্দাদের আসামি করায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিহারি নেতারা।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের সংগঠন এসপিজিআরসির কুর্মিটোলা ক্যাম্প শাখার সম্পাদক মো. শওকত হোসেন বলেন, “আমরা ওই ঘটনায় কোনো মামলা করিনি, উল্টো আমাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে।”
উর্দু স্পিকিং পিপলস ইয়ুথ রিহ্যাবিলেটেশন মুভমেন্টের সভাপতি মো. সাদাকাত হোসেন খান বলেন, “আমি এখন পর্যন্ত তিনটি মামলার কথা জানি। একটি করেছে পুলিশ (মামলা নম্বর ৩১)। বাকি দুটো করেছে মোবারক হোসেন (মামলা নম্বর ২৯) ও ওমর ফারুক (মামলা নম্বর ৩০) নামের দুই ব্যক্তি। তিনটি মামলাই করা হয়েছে আমাদের বিরুদ্ধে, একই দিনে। এর মধ্যে ২৯ ও ৩০ নম্বর মামলা দুটির ভাষা প্রায় এক।”
সাদাকাত হোসেন জানান, হামলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াসিন তার মেয়ের সেরে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছেন। এরপরই তিনি মামলা করবেন।
এ প্রসঙ্গে ইয়াসিন বলেন, “আমি এসপিজিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে মামলা করব।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয়টি মামলার তদারককরী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম প্রায় দুই বছরের ছুটি নিয়ে বিদেশে পড়তে গেছেন। মামলার ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তার পরিবর্তে দায়িত্বে এসেছেন সহকারী কমিশনার মাহবুবুর রহমান। তিনি এখনও কাজ শুরু করেননি। ফলে তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।