বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খানের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ আনছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
Published : 25 Aug 2014, 02:38 PM
তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান সোমবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ওই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ৮৪৪ পৃষ্ঠার নথি তৈরি করা হয়েছে। এজন্য ৬৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দি তারা শুনেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হচ্ছে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে।
সোমবারই এ তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে সমন্বয়ক জানান।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাগেরহাটের কচুয়ার শাঁখারীকাঠি বাজারে ৪২ জনকে গণহত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগ্নিসংযোসহ ছয়টি অভিযোগে ২০০৯ সালে সিরাজ মাস্টারসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়।
ওই গণহত্যায় নিহত রঘুদত্তকাঠি গ্রামের শহীদ জিতেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে নিমাই চন্দ্র দাস কচুয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুন এই তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে কচুয়া থানা পুলিশ গত ১১ জুন লতিফ তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে।এরপর ১৯ জুন আকরাম হোসেন খানকে গ্রেপ্তার করা হয় রাজশাহী থেকে। ২০ জুলাই গ্রেপ্তার হন সিরাজ মাস্টার।
প্রসিকিউশনের তদন্ত দল দীর্ঘ তদন্ত শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।
তদন্ত সংস্থা বলছে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আসামিরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়।
খুলনার আনসার ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র ও গুলি সংগ্রহ করে তারা অন্যান্য রাজাকার সদস্যদের সঙ্গে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ চালায় বলে তদন্ত সংস্থার অভিযোগ।
আট অভিযোগ
অভিযোগ ১: একাত্তরের ১৩ মে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার রঞ্জিতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরের সমস্ত মালামাল লুট এবং অগ্নি সংযোগ করা হয়। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪০/৫০ জন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ২: ভারতের শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালের ২১ মে বাগেরহাট জেলার রামপাল থানাধীন ডাকরার কালীমন্দিরে জড়ো হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই-তিন হাজার লোক। তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ছয় থেকে সাতশ লোককে হত্যা করে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগ ৩: ১৯৭১ সালের ১৮ জুন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগেরহাট সদরের বেসরগাতী, কান্দাপাড়া এলাকায় ১৯ জন নিরস্ত্র লোককে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে তিন আসামি ও তাদের সহযোগীরা।
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার সদর থানাধীন চুলকাঠিতে হামলা চালিয়ে ৫০টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে রাজাকাররা। এ সময় সাতজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাগেরহাটের কচুয়া থানাধীন শাঁখারীকাঠি হাটে হামলা চালিয়ে ৪২ জন নিরস্ত্র লোককে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় অনেক বাড়ির মালামাল লুট করে অগ্নিসংযোগও করা হয়।
অভিযোগ ৬: ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে কোনো এক দিন শাঁখারিকাঠি ও আশেপাশের এলাকার প্রায় দুইশ হিন্দুকে কলেমা পড়িয়ে নাম পরিবর্তন করে গো-মাংস দিয়ে ভাত খেতে বাধ্য করা হয়।
অভিযোগ ৭: ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধরে আনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পাঁচজনকে কচুয়া থানা সদরে আটকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়।
অভিযোগ ৮: ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানাধীন তেলিগাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান শিকদারকে আটক করে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়।