ভাষাসৈনিক মতিনের অবস্থার ‘সামান্য উন্নতি’

মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের দুই দিন পরও সংজ্ঞা ফেরেনি ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2014, 12:31 PM
Updated : 8 Oct 2014, 05:23 AM

আবদুল মতিনের রাজনৈতিক সহকর্মী মফিজুর রহমান লাল্টু শুক্রবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার চেতনা এখনো ফেরেনি। তবে স্পর্শ করলে তিনি বুঝতে পারছেন বলে মনে হয়।”

“অবশ্য চিকিৎসকরা বলছেন, বৃহস্পতিবারের চেয়ে তার অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে।”

মফিজুর জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আবদুল মতিনের রক্তচাপ একটু কমে গেলেও ভোরের দিকে তা ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা আপাতত নেই।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (পুনর্গঠিত) নেতা আবদুল মতিন গত সোমবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্ট্রোক হওয়ায় তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।

এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ)। সেখানে বুধবার দুপুরে মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসকরা জমাট বাঁধা রক্ত সরিয়ে নেন বলে জানান তার ভাতিজা ফেরদৌসুর রহমান পিঙ্কু।

আবদুল মতিনের চিকিৎসার পুরো খরচ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বহন করছে বলে উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত জানান।

দুই মেয়ের বাবা আবদুল মতিন মোহাম্মদপুরে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তার জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে।

১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য তাকে ‘ভাষা মতিন’ নামেই চেনে সারা বাংলাদেশ।

মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১৯৪৫ সালে। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন।

১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন মতিন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে মতিন ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল ) গঠন করেন।

চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যেও আবদুল মতিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও আবদুল মতিন পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেই রয়েছেন।

ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’।

এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’।