ভাষাসৈনিক মতিনের অস্ত্রোপচার

ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে জমাট বাঁধা রক্ত সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

জেষ্ঠ্য প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2014, 10:22 AM
Updated : 20 August 2014, 06:30 PM

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া জানান, বুধবার বেলা পৌনে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে আব্দুল মতিনের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়।

এই ভাষা সৈনিকের ভাতিজা ফেরদৌসুর রহমান পিঙ্কু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিউরোলজির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আফজাল হোসাইনের নেতৃত্বে অপারেশন হয়েছে। তিনি আমাদের বলেছেন, এটি প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে।

“মস্তিষ্কে যেটুকু জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে ছিল, তা অপসারণ করা হয়েছে। এখন আমরা জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছি।” 

গত সোমবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আবদুল মতিনকে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সে সময় তার স্বজনরা জানিয়েছিলেন, স্ট্রোক হওয়ায় আবদুল মতিনের মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পরপরই তাকে দেখতে হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

অসুস্থ মতিনের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সুযোগ সুবিধার দিকে খেয়াল রাখতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা এখানকার চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।”

অসুস্থ মতিনকে বিদেশ নেয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে প্রয়োজন ও অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত জানান, আব্দুল মতিনের চিকিৎসার পুরো খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে।    

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আবদুল মতিন মোহাম্মদপুরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি দুই মেয়ের বাবা।

তার জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য তাকে ‘ভাষা মতিন’ নামেই চেনে সারা বাংলাদেশ।

ভাষা আন্দোলনের পর ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের ভূমিকা রাখা মতিন পরে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন।

১৯৫৪ সালে তিনি পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নিযুক্ত হন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল ) গঠন করেন।

চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যে আবদুল মতিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন।

২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও আবদুল মতিন পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেই রয়েছেন।

ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’।