গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনকে।
Published : 18 Aug 2014, 09:55 PM
৮৮ বছর বয়সী আবদুল মতিনের মস্তিস্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এজন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলেও তা এখন করার অবস্থা নেই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে আবদুল মতিনকে পঙ্গু হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে নেয়া হয় বলে তার ভাতিজা আবদুস সালাম জানিয়েছেন।
মতিনের ভায়রা টিপু বিশ্বাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্ট্রোক হয়েছে তার। ডান পাশ অবশ হয়ে পড়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।”
আবদুল মতিনের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা এবং চিকিৎসা নিয়ে রাতে চিকিৎসকরা জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক মাহমুদ হাসানও আসেন।
টিপু বিশ্বাস বলেন,“অধ্যাপক হাসান বলেছেন, তার (মতিন) মস্তিস্কের নিচের দিকে ঘাড়ের কাছে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এজন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও তা তার ধকল সামালানোর অবস্থা রোগীর নেই।”
তবে চিকিৎসকরা আশরা করছেন, দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে অস্ত্রোপচার করা যাবে।
মঙ্গলবার সকালে আবদুল মতিনের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হবে এবং সেখানে চিকিৎসকরা তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রয়োজন হলে আবদুল মতিনকে সেখানে স্থানান্তরের আশ্বাসও বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত দিয়েছেন বলে টিপু বিশ্বাস জানান।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আবদুল মতিন মোহাম্মদপুরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি দুই মেয়ের জনক।
আবদুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য তাকে ‘ভাষা মতিন’ নামেই চেনে সারা বাংলাদেশ।
ভাষা আন্দোলনের পর ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের ভূমিকা রাখা মতিন পরে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন।
১৯৫৪ সালে তিনি পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নিযুক্ত হন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল ) গঠন করেন।
চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যে আবদুল মতিনও চলছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন।
২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও আবদুল মতিন পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেই রয়েছেন।
ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’।