ভাষাসৈনিক মতিন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে

মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনকে মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2014, 06:21 AM
Updated : 19 August 2014, 09:37 AM

মঙ্গলবার সকালে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্ত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছাতেই আবদুল মতিনকে এখানে আনা হয়েছে। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।”

সোমবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ৮৮ বছর বয়সী এই ভাষাসৈনিককে প্রথমে পঙ্গু হাসপাতালে এবং পরে সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়।

চিকিৎসকরা জানান, স্ট্রোকের কারণে তার মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। তার শরীরের ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে।

মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলেও এর ধকল সামলানোর মতো অবস্থা তার এই মুহূর্তে নেই বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।

তারা আশা করছেন, দুই-একদিনের মধ্যে ভাষাসৈনিকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে পরে তারা অস্ত্রোপচার করতে পারবেন।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আবদুল মতিন মোহাম্মদপুরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন। তিনি দুই মেয়ের বাবা।

আবদুল মতিনের জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী উপজেলার ধুবলিয়া গ্রামে। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য তাকে ‘ভাষা মতিন’ নামেই চেনে সারা বাংলাদেশ।

ভাষা আন্দোলনের পর ছাত্র ইউনিয়ন গঠনের ভূমিকা রাখা মতিন পরে সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। এরপর তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন।

১৯৫৪ সালে তিনি পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক নিযুক্ত হন। মওলানা ভাসানী ‘ন্যাপ’ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল ) গঠন করেন।

চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যে আবদুল মতিনও চলছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখেন।

২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে হায়দার আকবর খান রনোর নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন) গঠিত হলে আবদুল মতিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। হায়দার আকবর খান রনো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও আবদুল মতিন পুনর্গঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গেই রয়েছেন।

ভাষা আন্দোলন বিষয়ে তার রচিত বিভিন্ন বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘বাঙালী জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন’, ‘ভাষা আন্দোলন কী এবং কেন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘জীবন পথের বাঁকে বাঁকে’।