নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি।
Published : 17 Jul 2014, 03:04 PM
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত সচিবালয়ে এই র্যাব কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাজাহান আলী মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, “সাত খুনের ঘটনায় তিন র্যাব কর্মকর্তা গ্রেপ্তার রয়েছেন। তাই এই বাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে ডাকা হয়েছে, তারা এ বিষয়ে কতটুকু জানেন তা জানতে। আমরা তার বক্তব্য রেকর্ড করেছি।”
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউলের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- এমন প্রশ্নে শাহজাহান বলেন, “এ বিষয়ে পরে জানতে পারবেন। জিয়াউলকে ব্যক্তিগতভাবে নয়, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসাবে ডাকা হয়েছে।”
কমিটি নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমান বা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে কি না জানতে চাইলে কমিটির প্রধান বলেন, সেটি ‘সময় মতো’ জানা যাবে।
তবে ঘটনার তদন্তে বেশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে শাহজাহান বলেন, “সাড়ে তিনশ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আর কাকে কাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তা তদন্ত কমিটি বসে ঠিক করবে।”
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র্যাবকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।
শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।
র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন।
এই খুনের ঘটনা আগে থেকেই জানতেন বলে সে সময় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে।
তদন্ত কমিটিতে সাক্ষ্য শেষে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জিয়া বলেন, “পরে তা টের পাবেন, সঠিক তদন্ত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটি সাত খুনের ঘটনা সম্পর্কে যেভাবে জানতে চেয়েছে তাদের সেভাবে জানিয়েছি। তারা যে প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর দিয়েছি।”
নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদপত্রে জিয়ার দেয়া বক্তব্য নিয়ে এর আগে উষ্মা প্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট।
নজরুলের শ্বশুর শহীদুল কোনোভাবে সাত খুনে জড়িত কি না, তাও খতিয়ে দেখার কথা বলেছিলেন জিয়া। তার ওই সাক্ষৎকার গত ১২ মে দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশ করা হয়।
এই সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর তা নিয়ে শহীদুলের প্রতিক্রিয়া সংবাদপত্রে আসে, যা বিচারকেরও নজরে আসে।
ওই সাক্ষাকারের জন্যই জিয়াকে ডাকা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি শাহজাহান।
সাত খুনের ঘটনায় র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এই তদন্ত কমিটি করে সরকার।
নারায়ণগঞ্জের অপহারণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করবে কমিটি।
অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।