যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বরোয় নির্বাচনে ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে একটি নির্বাচনী অভিযোগ তদন্তকারী কমিশনের পক্ষ থেকে।
Published : 01 Jul 2014, 11:38 PM
ভবিষ্যতে ভোটগণনায় জালিয়াতির আশঙ্কা দূর করতে এই বরোয় শুধু ইংরেজি ভাষিকদের নির্বাচন কর্মকর্তা ও এজেন্ট নিয়োগ দিতে বলেছে তারা।
ইলেকটোরাল কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র, স্থানীয় ও ইউরোপিয়ান ইলেকশনের ভোটগণনায় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও ব্যবস্থার অভাব ছিল এবং ব্যবস্থাপনাও ছিল নাজুক।
ওই নির্বাচনে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এই কাউন্সিলে লেবার পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে মেয়র পদে পুনর্নির্বাচিত হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফর রহমান, যার বিরুদ্ধে ‘উগ্রপন্থী’ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে ২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হন লুৎফর। তখন থেকেই সেখানে নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
ইলেকটোরাল কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তা জন উইলিয়ামসের উচিত টাওয়ার হ্যামলেটস নিয়ে একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা।
এদিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেশটির স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এরিক পিকলস বলেছেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নিয়োজিত সংস্থাকে তথ্য দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার হাউজ অফ কমন্সে তিনি বলেন, প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। ঠিকমতো তথ্য না পাওয়ায় তাদের তদন্তের সময় বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি সময় তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলকে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
“তদন্তকারী পিডব্লিউসি আমাকে জানিয়েছে যে, তথ্য দিতে বিলম্ব করে বা একেবারেই তথ্য না দিয়ে ওই কাউন্সিল তদন্ত দীর্ঘায়িত করছে,” বলেন তিনি।
ইলেকটোরাল কমিশনের প্রতিবেদনে মে মাসে কয়েকদিন ধরে ভোটগণনার গোলমেলে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভোটগণনার সময় ভবনের বাইরে লুৎফরের কয়েকশ’ সমর্থক অবস্থান নেয়, যেখানে ভিতরে ভোট গণনাকারী, এজেন্ট ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব ছিল।
এসব অভিযোগের মধ্যে ভোটারদের জোরাজুরি করা, ভোট গণনার সময় বহিরাগতদের উপস্থিতি, ভোট গণনাকালে লুৎফরের বিপুল সংখ্যক সমর্থকের উপস্থিতির প্রভাব ইত্যাদি রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোট গণনা কেন্দ্রে সংশ্লিষ্টদের যথাসময়ে না যাওয়া এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় বোঝা যায়-সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভোটগণনাকারী ছিলেন না।
ভবিষ্যতে আশঙ্কা এড়াতে পরিকল্পনার তুলে ধরার পাশাপাশি ভোটগণনার জন্য একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচনেরও ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে ইলেকটোরাল কমিশন।
বড় দুই দলের প্রতিনিধিরা বলছেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থা তৈরিতে কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে তাদের সংশয় রয়েছে।
এই কাউন্সিলে কনজারভেটিভদের নেতা পিটার গোল্ডস বলেন, কমিশন অতীতে নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে অনেকবার সতর্ক করলেও তা ঠেকাতে তারা কিছু করতে পারেনি।
ভোটের লড়াইয়ে সুবিধা পেতে প্রথম মেয়াদে মেয়র থাকাকালে লুৎফর রহমান তার এলাকায় বাংলাদেশি ও সোমালি নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন সংস্থাকে বাড়তি বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগসহ আরো কিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস।