স্বামী এ বি সিদ্দিককে তুলে নেয়ার পর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অপহরণকারীরা এখনো কোনো যোগাযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন এই পরিবেশ আইনজীবী।
তিনি নিজে অপরিচিত বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছেন জানিয়ে রিজওয়ানা বলেছেন, তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তা এখন প্রকাশ করতে রাজি নন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্বামী অপহৃত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় বৃহস্পতিবার বিকালে মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা)নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা।
‘উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন হামিদা হোসেন, সুলতানা কামাল, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ইফতেখারুজ্জামান, সাদেকা হালিম, ফরাহ কবীর, অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ।
রিজওয়ানার স্বামী নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক নিজের গাড়িতে ঢাকায় ফেরার পথে বুধবার দুপুরের পর সড়ক থেকে অপহৃত হন।
অপহরণকারীদের গাড়িটি চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে তাকে দ্রুত উদ্ধারের আশা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলেছে, এই পরিবেশ আইনজীবীর স্বামীকে উদ্ধারের জন্য তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ওপর ভরসা রাখছেন রিজওয়ানাও।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তার ‘আত্মবিশ্বাসী’ মনে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক পর্যায়ে কান্নাভেজা কণ্ঠে রিজওয়ানা বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে আশ্বাস ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় দ্রুত স্বামীকে ফিরে পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।
মুক্তিপণ বা চাঁদা দাবি করে কোনো ধরনের হুমকি পাননি বলে জানান তিনি।
“তবে বিভিন্ন পর্যায় থেকে নানা তথ্য দিয়ে ফোন এসেছে। তদন্তের স্বার্থে তা আপনাদের জানাচ্ছি না। যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
অপহরণের কারণ কী মনে করছেন- জানতে চাইলে রিজওয়ানা বলেন, কারো সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ ছিল না। তবে স্ত্রীর কাজে সব সময় সমর্থন দিয়ে গেছেন তিনি।
“আমার দ্বারা প্রাইভেট কোম্পানি প্রকল্পের যারা আর্থিকভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের অর্থনৈতিক স্বার্থে আঘাত হেনেছে, তারাই মূলত থ্রেট ছিল, তাদেরকে যেন তদন্তের বাইরে রাখা না হয়।”
স্বামী অপহরণের পর বুধবার নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের কাছেও একই সন্দেহের কথা জানিয়ে কয়েকটি কোম্পানির নাম বলেছিলেন তিনি।
তবে স্বামী অপহরণের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে যে মামলা করেছেন, তাতে কারো নাম উল্লেখ করেননি এই আইনজীবী। সংবাদ সম্মেলনেও কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম বলেননি তিনি।
এ বি সিদ্দিক যে কারখানাটির কর্মকর্তা, তার মালিক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। কারখানাটি বন্ধ ছিল, গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে তা চালু করেন রিজওয়ানার স্বামী।
অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ ছিল কি না - জানতে চাইলে তা উড়িয়ে দেন এ বি সিদ্দিকের স্ত্রী।
“বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের কথাটি একেবারেই হাওয়াই কথা। দুজনের মধ্যে বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।”
২০ বছরের দাম্পত্য জীবনে কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেও দাবি করেন রিজওয়ানা।
সংবাদ সম্মেলনে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকদের’ পক্ষ থেকে এ বি সিদ্দিককে উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।
আইন-সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, “যে সরকার নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করছে, জনপ্রতিনিধিত্বশীল বলে দাবি করছে; এ পরিস্থিতি তাদের দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
“আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। দিনে-দুপুরে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এখন দ্রুত রিজওয়ানার স্বামীকে ফেরত চাই আমরা। এতে ব্যর্থ হলে অবশ্যই সরকারের জবাবদিহি করতে হবে।”