নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বুধবার বিকাল পৌনে ৩টার দিকে ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক (৪৭) এ বি সিদ্দিক নামে পরিচিত। ফতুল্লার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত তিনি।
তিনি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর মালিকানার হামিদ ফ্যাশনসের নির্বাহী পরিচালক। তারও আগে তিনি কাজ করতেন সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর প্রতিষ্ঠানে।
কী কারণে এ বি সিদ্দিককে অপহরণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। অপহৃতকে উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
এ বি সিদ্দিককে উদ্ধার এবং অপহরণের রহস্য উদ্ঘাটনে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার।
রিজওয়ানার সন্দেহ, তার পেশাগত কাজে ক্ষুব্ধ কেউ এ বি সিদ্দিককে অপহরণ করেছে। তিনি থানায় মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আকতার হোসেন।
ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী রিজওয়ানা পরিবেশ ধ্বংসের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সক্রিয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বিভিন্ন মামলায় আইনি লড়াই চালাচ্ছেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠা এ বি সিদ্দিক গত ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রীর হামিদ ফ্যাশনস পরিচালনার দায়িত্ব নেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের ফতুল্লা আঞ্চলিক শাখার সভাপতি কাউসার আহম্মেদ পলাশের নেতৃত্বে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে কারখানাটি কয়েক বছর বন্ধ ছিল।
যেভাবে অপহরণ
এ বি সিদ্দিক তার প্রাইভেটকারে চালক রিপন মিয়াকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। ফতুল্লা থানার ভুইগড় এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে ভূঁইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে তাকে তুলে নেয় অস্ত্রধারীরা।
বেলার সদস্য আইনজীবী সাইদ আহমেদ সৌরভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবু বকর সিদ্দিকের প্রাইভেট কারকে নীল রংয়ের একটি মাইক্রোবাস আঘাত করে।
“কী ক্ষতি হয়েছে দেখার জন্য চালক রিপন এবং তিনি গাড়ি থেকে নামামাত্রই ওই মাইক্রোবাসে থাকা দুবৃর্ত্তরা চালকের মাথায় পিস্তল দিয়ে আঘাত করে এবং চোখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে আবু বকর সিদ্দিককে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।”
রিপন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে তারা হামিদ ফ্যাশনস থেকে বেরিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়ে ঢাকায় রওনা হন। তাদের প্রাইভেটারটি লিংক রোডের শিবু মার্কেট অতিক্রম করার পর থেকে নীল রঙের একটি মাইক্রোবাস তাদের অনুসরণ করতে থাকে।
“ভূইয়া ফিলিং স্টেশনের কাছে ওই হাইয়েস মাইক্রোবাসটি আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা দেখতে আমরা দুজনই নিচে নামি। এসময় মাইক্রোবাস থেকে ৬/৭ জন সুঠামদেহী ছোট চুলের অস্ত্রধারী লোক বের হয়ে আসে।”
রিপন বলেন, তাকে পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাতের পর চোখে মরিচের গুঁড়োর মতো ঝাঁঝালো পদার্থ ছুড়ে মারে অপহরণকারীরা। এরপর এ বি সিদ্দিককে মারতে মারতে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
মাইক্রোবাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে সাইনবোর্ডের দিকে চলে যেতে দেখেন রিপন। ওই সময় এ বি সিদ্দিক ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করলেও আশপাশের কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেনি বলে জানান তিনি।
পুলিশের পদক্ষেপ
এ বি সিদ্দিক অপহরণের খবর পেয়েই তা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালককে জানানো হয় বলে বেলার সদস্য সাঈদ আহমেদ সৌরভ জানান।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে ঘটনাস্থলের আশপাশের সকল টহল টিমকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের পাশের জেলা পুলিশ সুপার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
নুরুল ইসলাম বলেন, অপহৃতকে উদ্ধারে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ৪টি দল, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত অন্য বাহিনীরও সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
রিজওয়ানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেন, “আপনারা যদি নারায়ণগঞ্জের টর্চার সেলগুলোতে অভিযান চালান, তাহলে হয়ত ওর (সিদ্দিক) খবর পাওয়া যেতে পারে।”
তখন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, “টর্চার সেলগুলো তো র্যাব অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।”
অপহরণস্থল থেকে রিজওয়ানা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শহীদুল ইসলামের গাড়িতে চড়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান।
সেখানে পৌঁছার পর তিনি পুলিশপ্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ র্যাবের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে টেলিফোন করে স্বামীকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।
রিজওয়ানার সন্দেহ
বেলার নির্বাহী পরিচালক রিজওয়ানা দাবি করেছেন, তার পেশাগত কাজে ক্ষিপ্ত হয়ে কেউ তার স্বামীকে অপহরণ করেছে।
অপহরণস্থলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার জানা মতে, তার (সিদ্দিক) কোনো শত্রু নেই। আমাদের এমন কোনো টাকা-পয়সাও নেই যে, কেউ অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে।
“আমার পেশাগত কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা, মধুমতি, আশিয়ান, শিপ ব্রেকারসহ কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠি চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারাই হয়ত পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে।”
“আমি আমার স্বামীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত চাই,” বলেন রিজওয়ানা।