আগামী পাঁচ বছর পর তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঠিক করেছেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
Published : 18 Mar 2014, 09:24 PM
আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই খাতে রপ্তানি আয় পোশাক খাতকেও ছাড়িয়ে যাওয়াটা কঠিন হবে না বলে মনে করেন তিনি।
১৪ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে বর্তমানে রপ্তানির আয়ের শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক খাত, যা থেকে বছরে ২ হাজার কোটি ডলার আসে।
পাঁচ বছর আগে ক্ষমতা নেয়ার পরপরই তথ্য প্রযুক্তি খাতকে গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ, যার নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জয়।
মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে সরকারের এই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে যুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর যে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন, মঙ্গলবার রূপসী বাংলা হোটেলে এক মতবিনিময় সভায় সে ভাবনার কথা তুলে ধরেন জয়।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শতাধিক তরুণ উদ্যোক্তা, আইসিটি বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীর অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠানে জয় আশ্বাস দেন, ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতি ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক কেবল নিয়ে যাওয়া হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে আগামী ৫ বছরে কী উদ্যোগ নেয়া হবে- জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীপুত্র বলেন, গত ৫ বছরে তার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার একটি ভিত গড়ে তোলা। এখন লক্ষ্য সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এগিয়ে চলা।
“আমরা যখন শুরু করি ২৩ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি ছিল, তা এখন ২০০ মিলিয়ন হয়েছে। এই গ্রোথ রেট ধরে রাখব, আগামী ৫ বছরের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা করি।”
“আগামী ৫ বছরে মূল গুরুত্ব হবে আইটি ইন্ডাস্ট্রি ডেভলপমেন্ট এবং এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট , আইটি ইন্ডাস্ট্রির আয়ের ধারাবাহিতা বজায় থাকলে গার্মেন্টস শিল্পের আয় অতিক্রম করবে।”
“আমার টার্গেট ছিলো বাংলাদেশে আমি একটা নলেজ বেসড সোসাইটি তৈরি করব। আমরা আইটি ইকনোমি এবং আইটি আউটসোর্স ডেস্টিনেশন হিসেবে দাঁড়াব। আর আইটি এক্সপোর্ট ইভেনচুয়ালি অন্যান্য এক্সপোর্টকে এক্সিড করবে। এটাই আমার প্ল্যান, অ্যাম্বিশন।”
“সফটঅয়্যার ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব।”
সভায় বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, গত ৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে জনশক্তি রপ্তানি ২৫ হাজার থেকে আড়াই লাখ হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা করেছে, উদ্যোক্তারা স্বল্প সুদে ঋণ পাচ্ছে, মার্কেটিংয়ের জন্য রোড শো করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
রাজধানীর জনতা টাওয়ারে আইটি পার্ক এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক তৈরির উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯ সংশোধন নিয়ে জয় বলেন, “পলিসি একটু দেরিতে করলেও ক্ষতি নেই, বাস্তবায়ন যেন দ্রুত হয় সেখানেই গুরুত্ব দিচ্ছি। পলিসি রিভাইজ হতে থাকবে, প্রয়োজনে বারবার হবে।
“উদ্দেশ্য সামনে এগোনো, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।”
“যখন আইসিটি পলিসি বানাই, সরকারি অফিসে টাইপরাইটারের পরিবর্তে কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয়, তখন হাইলেভেল পলিসি করতে চাইনি। আমরা আইসিটি পলিসি করেছি, তা যেন বাস্তবায়ন করা যায়।”
গত ৫ বছরে এগিয়ে গেলেও কোনো হতাশা আছে কি না- জানতে চাইলে জয় বলেন, “ফাস্ট্রেশন অবশ্যই আছে, সার্ভিস ও ডিজিটালাইজেশনের দিক থেকে চমৎকারভাবে এগিয়ে গেছি।
“তবে গত ৫ বছরে ইউনিয়ন পর্যন্ত ফাইবার অপটিক কেবল নিয়ে যাবার পরিকল্পনা ছিল, তার ধারে কাছেও যাইনি। আগামী ৫ বছরে তা করা হবে।”
জয় জানান, তার প্রথম ৫ বছরের লক্ষ্য ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটালাইজড করা, দ্বিতীয় পাঁচ বছরের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দিকে নজর রাখার পরিকল্পনা ঠিক করেন তিনি।
“দেশব্যাপী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে, কী প্রশিক্ষণ নিলে ভালো হবে তা জেনেছি, বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ ট্রেনিং চলছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ফ্রি ল্যান্সিংয়ে ৩ নম্বরে রয়েছে। বেশিরভাব ফি ল্যান্সারদের মার্কেট করার পলিসি নেই, তাদের বর্তমানে বিজনেস কেইস দেখানো হচ্ছে যাতে তারা ব্যবসায় এগিয়ে যেতে পারে।”
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা (ই-কমার্স) সাদেকা হাসান সেঁজুতি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা বাড়ানো বিশেষ করে বিদেশের সঙ্গে লেনদেনে পেপাল চালুর আহ্বান জানান।
জয় বলেন, “যত যোগ্যতা ছিল পেপাল পেতে, তার সব যোগ্যতা বাংলাদেশের রয়েছে, পেপালের প্রতিটি দেশের জন্য একটি মডিউল করে, তবে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই, তাদের চাপ দেয়া হচ্ছে, এখনো পেপালের জন্য অপেক্ষা করে আছি।”
তবে পেপালের জন্য অপেক্ষা না করে মাস্টারকার্ড কিংবা ভিসাকার্ডের সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
উদ্যোক্তা শাহরুখ ইসলাম বলেন, ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ড রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের, উদ্যোক্তাদের এমন কোনো সিস্টেম করা যায় কি না যে তারা টাকা ট্রান্সফার করতে পারে।
ভার্চুয়াল ক্রেডিট কার্ডের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীপুত্র।
অবকাঠামো উন্নয়নে আরো কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখন পরিকল্পনা দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের। বিটিসিএল ও মোবাইল অপারেটর ছাড়াও এখন দুটি এনটিটিএন কোম্পানি ফাইবার অপটিক লাইন স্থাপনে কাজ করছে।
“আরো তিনটি এনটিটিএন কোম্পানি এ লাইসেন্স নিতে আগ্রহী, আমরা আরো লাইসেন্স দেব।”
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা বাড়েনি জানার পর জয় বলেন, “এটা আমাদের ব্যর্থতা।”
প্রণয়নের সময় সরকারের সব নীতিমালা ওয়েবসাইটে তুলে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেয়ার কথাও বলেন তিনি।
গুগলের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিটিভ কাজী মনিরুল কবির বলেন, “শুধু এই পলিসি নয়, এর সঙ্গে যেগুলো জড়িত রয়েছে, যেমন এ সংক্রান্ত আইন, ব্যাংকিং সিস্টেমে রিফর্মসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও রিফর্ম করতে হবে।”
জয় বলেন, “আমাদের অনেকগুলো আইন আছে সব কিছু রিফর্ম করতে হবে তা নয়। অনেক ভালো আইন আছে, বিটিআরসির লোকবল কম, ইনফোর্সমেন্ট কম।”
ভ্যালু এডেড সার্ভিস নীতিমালা হলেও তা চূড়ান্ত কেন করা হল না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আইপি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপাটি) আইন ঠিকঠাকভাবে চললে ভ্যাস দরকার নেই, আপাতত প্রয়োজন নেই বলে বাদ দেয়া হয়েছে, আগামীতে যে হবে না, তা নয়।”
রাষ্ট্র চালনায় নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আরো সুসংহত করার জন্য রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তা, আইসিটি বিশেষজ্ঞ এবং পেশাজীবীদের মতামতকে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে জয়ের সঙ্গে মতবিনিময়ের এই উদ্যোগ নেয় সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এই সভার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
“সোসাল মিডিয়ায় তরুণরা বলে, তারা রাজনীতি পছন্দ করে না, রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ড পছন্দ করে না, কিন্তু বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী জায়গায় তারা তাদের মতামত দিতে চায়। আজ সিআরআই যে সুযোগ করে দিয়েছে।”
২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সফল করার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা জানান তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী।