Published : 10 Feb 2014, 10:27 PM
দৃক গ্যালারি, একটি বই হাতে মাহির সরওয়ার মেঘ।
“আমার বাবার লেখা বইটির দাম দেড়শ’ টাকা। আপনি চাইলে একটা সাদা-কালো রংয়ের বই নিতে পারেন।”
এই কথায় একটি বই কেনার পর মেঘের স্বাক্ষরও মেলে। এ সেই মেঘ, দুই বছর আগে যার আকাশ আঁধার হয়েছিল; সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির একমাত্র সন্তান।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে নিজেদের বাসায় খুন হন সাগর-রুনি, যে হত্যাকাণ্ডের জট খোলেনি দুই বছরেও।
যারা তদন্ত করছে, সেই র্যাব দাবি করছে পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ চলছে; তবে অগ্রগতি কতদূর- জানতে চাইলে ‘তদন্তাধীন’ বিষয় বলে মুখে কুলুপ আঁটলেন বাহিনীর মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান।
হত্যাকাণ্ডের পর সাংবাদিক সংগঠনগুলো জোর দাবি নিয়ে মাঠে নামলেও দিন গড়াতে গড়াতে এখন আর সেই সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।
হত্যা রহস্যের জট না খোলা এবং তা উদ্ঘাটনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে ভাটার টান দেখা গেলেও এখনো আশা ছাড়ছেন না রুনির ভাই নওশের আলম রোমান, এই হত্যাকাণ্ডের মামলার বাদি তিনি।
হত্যাকারী চিহ্নিত না হওয়ায় রোমানের চোখে হতাশার ছায়া থাকলেও কণ্ঠে তার ছাপ ছিল না।
“আমার বিশ্বাস এখনো হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার সময় শেষ হয়ে যায়নি। তদন্তে যুক্ত সবাই আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা যাবে বলে আশা করি।”
দৃক গ্যালারিতে সোমবার মামা নওশেরের সঙ্গেই গিয়েছিল মেঘ। মৃত্যুর দুই বছরে পরিবারের উদ্যোগে সেখানে আলোকচিত্র প্রদর্শনী চলছে।
প্রদর্শনীতে সাগরের লেখা ‘কর্ণেলকে আমি মনে রেখেছি’ হাতে ছিল মেঘ; দেখছিল অকালে হারিয়ে ফেলা বাবা-মায়ের ছবি।
মেঘ থাকে ইন্দিরা রোডে তার নানা বাড়িতে, পড়ে উইলিয়াম কেরি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সিনিয়র কেজি শ্রেণিতে। “প্রতিদিন স্কুলে যাই,” বলে মেঘ।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘দোষীদের’ খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এর চারদিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার দাবি করেন, তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য’ অগ্রগতি হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি দেশবাসীকে ‘ইতিবাচক’ খবর দেয়ারও আশাও দিয়েছিলেন তিনি।
তারও দুদিন পর ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের সন্দেহের তালিকায় কয়েক পেশার লোক রয়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হলেই গ্রেপ্তার হবে খুনি।
কিন্তু তদন্ত শুরুর দুই মাসের মাথায় আদালতে ব্যর্থতা স্বীকার করতে হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় র্যাবের ওপর।
২০১৩ সালের অক্টোবরে হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে চিহ্নিত করে সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনই চিকিৎসক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি, যা সাগর-রুনির খুনকেও ডাকাতির ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে।
গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে রুনির ‘কথিত’ বন্ধু তানভীর রহমান ছিলেন। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, তানভীর তাদের পারিবারিক বন্ধু নয়।
‘চিহ্নিত’ আটজনের মধ্যে বাকি একজন অর্থাৎ সাগর-রুনির বাড়ির পাহারাদার হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হয় হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হওয়ার দুদিন আগে, ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি।
তদন্তের দায়িত্বে থাকা র্যাব উদ্যোগী হয়ে হত্যা রহস্য উন্মোচনের বিষয়ে এখন কিছুই জানায় না বলে অভিযোগ করেন মামলার বাদি নওশের।
র্যাব তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর সন্দেহভাজন ১৬ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। এছাড়া আলামাত হিসেবে জব্দকৃত ছুরি ও পোশাকের নমুনাও পাঠানো হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এই পর্যন্ত ১২৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। তবে এখনো কিছু প্রতিবেদন তৈরি বাকি রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান র্যাবপ্রধান মোখলেছুর রহমান।
“র্যাব সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে তদন্ত করছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তাই বেশি কিছু বলা যাবে না।”