রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পর ক্ষোভ নিয়ে হল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
Published : 03 Feb 2014, 09:43 AM
বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় ছাত্রলীগকর্মীদের হামলার পর রোববার থেকেই ক্যাম্পাসে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে।
রোববার ক্যাম্পাসে ভাংচুরের অভিযোগে সজীব আহমেদ নামে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
দফায় দফায় হামলার ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর রাতে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ৮টার মধ্যে হল ছাড়তে বলে কর্তৃপক্ষ।
সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আবাসিক হলের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী সকালে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান রনি বলেন, “রাত ৯ টায় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পারি। মাস শেষে আমাদের অনেকের কাছে এখন টাকা নেই। তাছাড়া ওই রাতে টিকিট কাটাও সম্ভব হয়নি। এখন কাউন্টারে কোনো টিকেট পাচ্ছি না।”
সকাল ৮টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশনা থাকায় ৭টার পর থেকেই হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যাগ হাতে বেরিয়ে আসতে থাকেন। কিন্তু কাজলা ফটক ও বিনোদপুর ফটকে কোনো যানবাহন না পেয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তারা।
সকাল ৯টায় রাজশাহী বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশনেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। লাইন ধরে অপেক্ষা করেও টিকেট না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরো কয়েক ঘণ্টা সময় দিলে ছাত্রছাত্রীদের এতোটা ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।
মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী লাভু রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এতো সকালে টিকিট কে দেবে? যেখানে কয়েকদিন আগে এসেই সিট পাওয়া যায় না সেখানে কীভাবে পাব?”
এই সুযোগে অনেক বাস বেশি ভাড়া নিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক আয়তুল্লাহ খোমেনী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করছে। অনেককে শ্লোগান দিতেও শোনা যায়।
“ক্যাম্পাস যেদিন খুলবে ঠিক সেইদিন থেকে সান্ধ্যকোর্স বাতিল ও সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আবার আমাদের আন্দোলন শুরু হবে।”
মতিহার থানার ওসি শামসুর নূর সকাল ৯ টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববারের ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ভাংচুরের অভিযোগে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই সময় পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে রোববার আট সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা তিন সহকারী প্রক্টর ও পুলিশের উপ-কমিশনার প্রলম চিচিমকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে।
রাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শাকির আহমাদ ও প্রেসক্লাবের সভাপতি ডালিম হোসেন শান্ত এ তথ্য জানান।
রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সিণ্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করা হয়।
এছাড়া প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক খালেকুজ্জামানকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সিন্ডিকেট সদস্য অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক অধ্যাপক এন্তাজুল হক।
বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সান্ধ্যকোর্সের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে রোববার রাতের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে তার আগে রোববার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে জানানো হয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, আইন ও কলা অনুষদের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স চালু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ফি দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এরপর গত ১৬ জানুয়ারি থেকে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে গড়ালে শনিবার উপাচার্য বর্ধিত ফি স্থগিতের ঘোষণা দিলেও তা প্রত্যাহার দাবিতে আন্দোলনে অটল থাকার কথা জানায় শিক্ষার্থীরা।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে খন্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে জড়ো হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাদের মাইক কেড়ে নেয়।
এরপর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাছে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিলে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান রানার নেতৃত্বে একটি মিছিল এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগকর্মীরা। এ সময় অস্ত্র হাতে তাদের গুলিও ছুড়তে দেখা যায়। পুলিশের রবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাসে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।