শহরে গৃহকর্মে এসে নির্যাতিত কিশোরী আদুরিকে নিয়ে তার মা শাফিহা বেগম গ্রামে ফিরতে চাইলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তার।
Published : 28 Sep 2013, 11:52 AM
গ্রামের যাদের মাধ্যমে ১১ বছরের আদুরিকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, নির্যাতনের ঘটনা পুলিশকে জানানোয় তারা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শাফিহা।
আদুরি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর পল্লবী এলাকার একটি ময়লার স্তূপ থেকে অচেতন অবস্থায় আদুরিকে উদ্ধার করা হয়। নির্যাতনের পর তাকে ফেলে রাখা হয়েছিল সেখানে। নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আদুরিদের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের জৈনকাঠি গ্রামে। তিন বছর আগে বাবা আব্দুল খালেক মারা যাওয়ার পর নয় সন্তান নিয়ে গ্রামেই থাকছিলেন শাফিয়া (৬০)।
ঢাকা মেডিকেলে মেয়ের পাশে থাকা এই নারী শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেয়ের ভালোর আশায় চুন্নু মিয়া নামের গ্রামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে দুই বছর আগে ঢাকায় কাজে পাঠান তিনি।
প্রথমে আদুরি চুন্নুর শ্বশুরবাড়িতে কয়েক মাস কাজ করে। তারপর শ্যালক সাইফুল ইসলাম মাসুদের পল্লবীর বাড়িতে তাকে কাজ দেন চুন্নু।
আদুরিকে নির্যাতনের অভিযোগে মাসুদের স্ত্রী নদীকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের পর তিন দিনের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পল্লবী থানা পুলিশ।
আদুরি তার মাকে বলেছে, গৃহকর্ত্রী নদী তাকে দিনের পর দিন অত্যাচার করত।
দুপুরে হাসপাতালে মায়ের হাতে করলা ভাজা দিয়ে ভাত খেতে খেতে আদুরি বলে, “মা, আমারে গ্রামে নিয়া চল, আমি বাড়ি যাইতে চাই।”
স্বামীহীন সংসারে কষ্টই থাকলেও মেয়েকে নিয়েই এবার ফিরতে চান শাফিহা, তবে সেই সঙ্গে শঙ্কার কথাও জানালেন।
“চুন্নু মিয়া আমার ভাই নজরুলকে বলছে, তোমরা আদুরির ঘটনাটা থানা পুলিশরে জানাইয়া ভালো কর নাই। গ্রামে এলে কী হয়, দেখবা।”
শাফিহার ভয়, গ্রামে গেলে প্রভাবশালীদের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে নিরাপত্তা পাবেন না।
“আমার সুন্দর মেয়েটার গায়ে ব্লেডের এত দাগ’
আদুরির শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাফিহা।
“আমার সুন্দর মেয়েটার শরীরে এত্ত ব্লেডের দাগ! পেটে, পিঠে, বুকে গরম আয়রনের চিহ্ন! আহারে আমার মায়াটা, আহারে… বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলার সময় আবেগে শাফিহার কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে পড়ছিল বার বার।
মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে শাফিহা বলেন, “আদুরি ছোটবেলায় ছিল খুবই সুন্দর, মুখ ছিল ভরা, গোল-গাল।”
“ভেবেছিলাম, মেয়েটা অন্তত ভালো-মন্দ কিছু খেয়ে ভালো থাকবে, তা পূরণ হল না।”
আদুরির বর্তমান অবস্থার বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সে এখন আগের চেয়ে ভালো। শুকনো খাবার সে খেতে পারছে।
“আদুরির সর্ব্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।