জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের রায় স্থগিতের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত।
Published : 05 Aug 2013, 03:18 PM
চেম্বার আদালতের অবকাশকালীন বিচারক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী সোমবার এই আদেশ দেন।
সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় হাই কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ গত ১ অগাস্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচনে কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে।
রায়ের পর ওইদিনই চেম্বার জজের কাছে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল জমা দেন জামায়াতের আইনজীবীরা, যাতে রায়ের ওপর স্থগিতাদেশও চাওয়া হয়।
সোমবার চেম্বার জজের আদালতে ওই আবেদনের ওপর শুনানিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এম কে রহমান এবং নিবন্ধন বাতিল চেয়ে রিটকারীদের পক্ষে এম আমীরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আর জামায়াতের পক্ষে ছিলেন তাজুল ইসলাম।
আদালতের আদেশের পর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা সিএ (সিভিল আপিল) ফাইল করব। সেখানেও হয়তো আমরা স্থগিতাদেশ চাইব।”
চেম্বার জজ প্রথার বাইরে গিয়ে এই শুনানি করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে নির্বাচন কমিশন। সে সময় ৩৮টি দলের সঙ্গে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী জামায়াতে ইসলামীও নিবন্ধিত হয়। আইন অনুযায়ী শুধু নিবন্ধিত দলগুলোই বিগত নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়।
জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরিকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করে।
তাতে বলা হয়, চার কারণে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসাবে নিবন্ধন পেতে পারে না।
প্রথমত, জামায়াত নীতিগতভাবে জনগণকে সব ক্ষমতার উৎস বলে মনে করে না। সেইসঙ্গে আইন প্রণয়নে জনপ্রতিনিধিদের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকেও স্বীকার করে না।
দ্বিতীয়ত, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো সাম্প্রদায়িক দল নিবন্ধন পেতে পারে না। অথচ কাজে কর্মে ও বিশ্বাসে জামায়াত একটি সাম্প্রদায়িক দল।
তৃতীয়ত, নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের কোনো বৈষম্য করতে পারবে না। কিন্তু জামায়াতের শীর্ষপদে কখনো কোনো নারী বা অমুসলিম যেতে পারবে না।
চতুর্থত, কোনো দলের বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। অথচ জামায়াত বিদেশের একটি সংগঠনের শাখা। তারা স্বীকারই করে- তাদের জন্ম ভারতে, বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে।
ওই রিটের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে।
রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি(১)(বি)(২) ও ৯০(সি) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
পরে রুলটি বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে যায়। সেখানে আংশিক শুনানির মধ্যেই ওই বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তন হয়ে যায়। এরপর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে রিটের শুনানি শেষ হয় গত ১২ জুন।
বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের এই বেঞ্চ ১ অগাস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে।
সরকার ও বাম দলগুলো ওই রায়কে স্বাগত জানালেও জামায়াতে ইসলামী রায় প্রত্যাখ্যান করে ঈদের পর ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডেকেছে।