Published : 01 Apr 2013, 02:41 PM
সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে এই ঘোষণা দেন রুমী স্কোয়াডের সমন্বয়ক সাদাত হাসান নিলয়।
তবে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করতে আগামী ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ঘোষণা না এলে পুনরায় অনশনে বসার কথা জানান তিনি।
অনশন স্থগিতের ঘোষণার সময় মঞ্চে নিলয়ের সঙ্গে ছিলেন এ কে খন্দকার, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।
গত ২৬ মার্চ নিলয়ের নেতৃত্বে ওই স্থানেই অনশন কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। শুরুতে সাতজন হলেও পরে অনশনকারীর সংখ্যা ২৬ জনে দাঁড়ায়।
অনশন ভাঙা নিয়ে নিজেদের দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটার পর তারা রাতে অনশনস্থলে বৈঠকে বসেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সবাই অনশন ভাঙতে সম্মত হন।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙান।
নিলয় তখন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আমাদের দাবি থেকে সরে আসিনি। আগামী ৪ এপ্রিল গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে আমরা থাকব। প্রয়োজনে আমরা আবার কর্মসূচিতে যাব।”
ইমরান অনশনকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “রুমী স্কোয়াডের সদস্যরা আন্দোলনের শক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চলবে।”
আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর এটাই ছিল শাহবাগে আলাদা কোনো কর্মসূচি।
দুই কর্মসূচিতে কোনো বিরোধ নেই- গণজাগরণ মঞ্চ ও রুমী স্কোয়াডের পক্ষ থেকে বলা হলেও মতভেদ স্পষ্ট হয়েছিল সেদিন।
শাহরিয়ার কবির মঙ্গলবার বক্তব্যেও আন্দোলনকারীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
অনশনের সপ্তম দিনে সরকারের পক্ষ থেকে তা ভাঙার উদ্যোগ নিয়ে সোমবার রাত ৮টার দিকে শাহবাগে যান এ কে খন্দকার।
অনশনরতদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ জানান তিনি।
এ কে খোন্দকার বলেন, “সরকারের মন্ত্রী হিসেবে, একজন জনগণ হিসেবে তোমাদের কাছে বলতে চাই- সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধের চেষ্টায় আছে।
“যদি সরকার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে আমি নিজে তোমাদের কাতারে এসে যোগ দেব।”
শাহরিয়ার কবিরও অনশন ভাঙার জন্য আন্দোলনকারীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
রাত ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত অনশনস্থল জাতীয় জাদুঘরের ফটকের সামনে অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন এ কে খন্দকার। এরপর তিনি অনশনকারীদের নিয়ে পাশের গণজাগরণ মঞ্চে ওঠেন।
সেখানে প্রথমে বক্তব্য রাখেন অনশনকারী নিলয়। তিনি বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরুর সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া না গেলে অনশন ভাঙবেন না তারা।
এরপর শাহরিয়ার কবির ও এ কে খোন্দকার বক্তব্য রাখেন।
মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে এ কে খন্দকারের পরিচয় তুলে ধরে তার কথার আস্থা রাখার জন্য অনশনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান শাহরিয়ার কবির।
এরপর পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার বলেন, “অনশন যুদ্ধের অংশ। তবে যুদ্ধ করতে হলে শারিরীক দিক থেকেও শক্তিশালী হতে হবে।
“আমি জানি মানসিক দিক থেকেও তোমরা শক্তিশালী। এজন্য বৃদ্ধ বন্ধু হিসেবে অনুরোধ করছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তোমাদের চাই।”
“তাই আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা অনশন ভাঙবে।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে সরকার পদক্ষেপ না নিলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি।
“আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি,” বলেন মুক্তিযুদ্ধের উপঅধিনায়ক।
তবে তখনো আন্দোলনকারীরা ‘অনশন চলবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
তখন পরিকল্পনামন্ত্রীর কথার রেশ ধরে শাহরিয়ার কবির বলেন, “এ কে খন্দকার দেশের প্রবীণতম মুক্তিযোদ্ধা। এ দুই দাবিতে ২১ বছর ধরে তিনি আন্দোলনে আছেন।
“আপনাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে। আরো বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। ৬ এপ্রিলের পর দেশে কী হতে যাচ্ছে- সে ব্যাপারে আপনাদের ধারণা নেই।”
“মৌলবাদীদের শক্তি সম্পর্কেও আপনাদের ধারণা নেই। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের সরকার যখন ক্ষমতায় আছে, তখন আপনারা আন্দোলন করছেন।”
“সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট না করলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে তোমাদের কাতারে এসে যোগ দেবেন। এর চেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি কিছু হতে পারে না,” আন্দোলনকারীদের বলেন শাহরিয়ার কবির।
এরপর রুমী স্কোয়াডের মুখপাত্র বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে অনশন স্থগিতের ঘোষণা দেন।
তবে এতে অসন্তোষের প্রকাশ অনশনকারীদের মধ্য থেকেই ঘটেছে।
নিলয় বলেন, ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার যে কর্মসূচি রয়েছে, সেদিন সরকারের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না এলে তারা আবার অনশনে বসবেন।
সমাবেশে ইমরান এইচ সরকার।
গত ২৬ মার্চ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণার পর অনশনে বসে রুমী স্কোয়াড।
ইমরান কর্মসূচি ঘোষণার সময়ই ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির’ দাবিতে স্লোগান ওঠে সমাবেশে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হয় অনশন।