সৈয়দপুর ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সরসপুরে দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে।
Published : 17 Feb 2013, 06:01 AM
রোববার বিকাল ৫টায় স্থানীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় নামাজে জানাজায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে এলাকার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে দুপুরে কাপাসিয়া পাইলট হাইস্কুল মাঠে প্রথম জানাজা হয়। পরে মরদেহ নেয়া হয় গ্রামের বাড়ি সরসপুরে।
বিকালের জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন রাজীবের সম্পর্কীয় চাচা আমজাদ হোসেন মাস্টার। পারিবারিক কবরস্থানে দাদি রোকেয়া বেগমের কবরের পাশে দাফনের পর তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
এতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ সভাপতি কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ছানাউল্লাহ্ প্রমূখ।
কাপাসিয়া হাইস্কুল মাঠে প্রথম জানাজায় রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী অংশ নেন। অনেকে স্কুল মাঠে স্থান না পেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে জানাজায় শরিক হন।
আগে থেকেই সেখানে মরদেহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও শত শত সাধারণ মানুষ। মরদেহ পৌঁছানোর পর শোকে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
মরদেহ কাপাসিয়ার বাসায় পৌঁছানোর পরপরই সেখানে ছুটে যান স্থানীয় সাংসদ সিমিন হোসেন রিমি।
তিনি রাজীবের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ব্লগার রাজীবকে শুক্রবার রাতে রাজধানীর পল্লবীতে জবাই করে দুর্বৃত্তরা।
স্থপতি রাজীব নিয়মিতভাবে ব্লগে লিখতেন ‘থাবা বাবা’ নামে। লেখনীর মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার, জামায়াত-শিবিরের স্বরূপ উন্মোচনে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
বন্ধু ও স্বজনদের দাবি, জামায়াত-শিবিরই রাজীবকে হত্যা করেছে। এই দাবির ক্ষেত্রে জামায়াত সমর্থক হিসেবে পরিচিত ‘সোনার বাংলা’ ব্লগে রাজীবকে ‘হুমকি’ দিয়ে একটি পোস্টও তুলে ধরেছে তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় শাহবাগের জাগরণ সমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা তাদের চব্বিশ ঘণ্টার আন্দোলন সাত ঘণ্টায় কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন। কিন্তু এর তিন ঘণ্টার মাথায় রাজীব খুন হওয়ার খবর এলে আন্দোলনকারীরা আবার লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন।
শনিবার রাজীবের মরদেহ শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হলে বিক্ষুদ্ধ আন্দোলনকারীরা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান এবং শোককে শক্তিতে পরিণত করার শপথ নেন।
রাতে রাজীবের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। সকালে সেখান থেকেই রাজীবের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার বাড়িতে।
এদিকে শুক্রবার রাতে রাজীব নিহত হওয়ার খবর কাপাসিয়ায় পৌঁছলে শোকের ছায়া নেমে আসে।
শনিবার সকালে সচেতন নাগরিক সমাজ কাপাসিয়া উপজেলা শহরে শোক মিছিল বের করে। এলাকাবাসী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কাপাসিয়া সেতু সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড মোড়ে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখে।
কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগেও এ সময় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
কাপাসিয়া থানার ওসি দেলওয়ার হোসেন জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ জানান, কাপাসিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চত্বরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের যে নকশা রাজীব দিয়েছিলেন- সেটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
রাজীব ঢাকার পল্লবীতে থাকলেও তারা বাবা-মা কাপাসিয়াতেই থাকতেন।