জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানাবেন।
Published : 14 Sep 2017, 06:15 PM
রোহিঙ্গাদের কষ্ট দেবেন না: প্রধানমন্ত্রী
রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতিকে ‘মানবাধিকার সংকট’ বলল কোফি আনান কমিশন
সেই সঙ্গে শরণার্থী সঙ্কটের নিরসনে তিনি বাংলাদেশর প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী জানিয়েছেন ।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ১২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশন বসেছে। ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে সাধারণ বিতর্ক। অধিবেশনে অংশ নিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়ার্কে পৌঁছাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম সাধারণ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন এই বিশ্ব সংস্থার রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সঙ্কট যে এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, জাতিসংঘ মহাসচিবও সে কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের সম্মেলন এমন এক সময় হতে যাচ্ছে, যখন হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে।
মন্ত্রী বলেন, গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই মহিলা, শিশু ও বয়ষ্ক।
এছাড়া সহিংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আসা আরও চার লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে।
“ফলে লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিতে এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মুখোমুখি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এই সঙ্কটাপন্ন মুহূর্তে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ তুলে ধরে তার সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে পেশ করা হবে।”
গত বছর অক্টোবরে রাখাইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার পর সেনা অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনর প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশন তাদের তদন্ত শেষে গত ২৪ অগাস্ট মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির হাতে প্রতিবেদন দেন।
সেখানে তিনি বলেন, নাগরিকত্ব না পাওয়ায় এবং নিদারুণ বৈষম্যের কারণে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন রাজ্যে মুসলমান রোহিঙ্গারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে। তাদের ওপর বলপ্রয়োগের পথ ছেড়ে মিয়ানমার সরকারকে যৌক্তিক সমাধানের পথে আসতে হবে।
কফি আনান ওই প্রতিবেদন দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাখাইনের ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলা হয়। এরপর নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল চলছে।
মাহমুদ আলী বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বরাবরের মতই বাংলায় বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
“বক্তব্যে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ তুলে ধরে আশু সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন। তিনি অবিলম্বে কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাবেন।”
সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিও বিশ্বসভায় তুলে ধরবেন বলে জানান মন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার আলোচনায় বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এবার বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন।
আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের একটি সভা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে মিয়ানমারের সহিংসতা ও শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
“ওই সভায় অংশগ্রহণ করে প্র্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তুলে ধরবেন। এ সমস্যার আশু সমাধানে তিনি মুসলিম বিশ্বের কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ চাইবেন।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবার প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হচ্ছেন।