রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতিকে ‘মানবাধিকার সংকট’ বলল কফি আনান কমিশন

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতিকে ‘মানবাধিকার সংকট’ বলে বর্ণনা করেছে সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান নেতৃত্বাধীন কমিশন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2017, 03:04 PM
Updated : 18 August 2018, 11:21 AM

বৃহস্পতিবার স্বাধীন এ তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে সংকট মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি কয়েকটি সুপারিশ করেছে।

কমিশন বলেছে, রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্ব না পাওয়া এবং নিদারুণ বৈষম্যের শিকার হওয়ার কারণে অরক্ষিত অবস্থায় থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে।

বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ নাগরিকত্বহীনভাবে মিয়ানমারে রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমরাই হচ্ছে বিশ্বে এককভাবে নাগরিকত্বহীন সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী।

ছয়জন স্থানীয় এবং তিন বিদেশি মিলিয়ে মোট ৯ সদস্যের কোফি আনান কমিশন মিয়ানমার সরকারকে একটি সুপারিশমালা দিয়ে তাদের একবছরের কাজের ইতি টেনেছে।

ইয়াংগুনের একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার পেশ করা প্রতিবেদনে কমিশন রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ার জন্য একটি ‘পরিষ্কার সময়সূচি এবং কৌশল’ নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

বলা হয়েছে, “এ কৌশল স্বচ্ছ্ব, কার্যকরী এবং বিদ্যমান আইনের সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। রাখাইন রাজ্যসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কৌশলটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং ব্যাপক ভিত্তিক প্রচারের মধ্য দিয়ে বিষয়টি সবাইকে জানাতে হবে।

“যাদেরকে নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হয়নি তাদের মর্যাদা কি হবে তাও সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে। অন্য সব দেশের মতো মিয়ানমারেও যারা নাগরিকত্ব না পেয়ে বসবাস করছে তাদের একটি মর্যাদা থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে যারা মিয়ানমারে বাস করছে এবং কাজ করছে তাদের অধিকারও সমুন্নত রাখা দরকার।

“আর যাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়ে গেছে তাদের নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।”

মিয়ানমারে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করে আসার পরও ১৯৮২ সালে সামরিক সরকার নাগরিকত্ব আইন করে রোহিঙ্গাদেরকে ‘বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী শ্রেণিতে’ ফেলা হয়েছে। মিয়ানমারের এই নাগরিকত্ব আইনও পুনপর্যালোচনা করে দেখার সুপারিশ করেছে কমিশন।

সরকার রাখাইন রাজ্যকে কীভাবে উন্নত করতে পারে এবং রাজ্যটির অধিবাসীদের মধ্যে কিভাবে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে পারে সে সম্পর্কে কমিশনকে প্রস্তাব আনার কাজ দিয়েছিল মিয়ানমার।

রাখাইন রাজ্যটি বরাবরই সহিংসতা জর্জরিত হয়েছে। তবে খুব সম্প্রতি সেখানে গতবছরের ৯ অক্টোবরে তিনটি সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়।

রাজ্যটিতে সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে যায় ৮৭ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। নিরাপত্তা বাহিনীর শুদ্ধি অভিযানে সেখানে হত্যা, নির্বিচারে ধরপাকড়, ধর্ষণসহ নানা নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে।