ইউএনওর জামিন নামঞ্জুর হয়নি, হাজতে পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না: বিচারক

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমনের জামিন আবেদন একটিবারের জন্যও নামমঞ্জুর করা হয়নি বলে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আলী হোসাইন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2017, 08:21 PM
Updated : 25 July 2017, 11:26 AM

রোববার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর পাঠানো চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আদালতের কার্যপ্রণালী শেষে এজলাস ত্যাগ করে খাসকামরায় এসে শুনি ইউএনও সাহেবের জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে মর্মে অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।

“প্রকৃতপক্ষে ইউএনও সাহেবের জামিন আবেদন একটিবারের জন্যও নামঞ্জুর করা হয়নি। ফলে জেল হাজতে পাঠানোর কোনো প্রশ্নই উঠে না।”

বঙ্গবন্ধুর ‘বিকৃত’ ছবি স্বাধীনতাদিবসের আমন্ত্রণপত্রে ব্যবহারের অভিযোগের মামলায় সমনের প্রেক্ষাপটে গত বুধবার এই বিচারকের আদালতে হাজির হয়েছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার সাবেক ইউএনও তারিক।

ওই দিন শুনানির পর বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছিলেন তারিকের আইনজীবী মোখলেছুর রহমান খান। তিনি সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ওই আদেশের কিছুক্ষণ পর একই আদালত ইউএনও তারিকের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন মধ্যবর্তী সময়ে ঘণ্টা দুয়েক ইউএনওকে কারা হাজতে থাকতে হয়।

বর্তমানে বরগুনা সদর উপজেলার ইউএনও’র দায়িত্বে থাকা তারিক তার জেলা প্রশাসককে পাঠানো চিঠিতেও প্রথমে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার কথা লিখেছেন।

ইউএনওকে নাজেহাল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নির্দেশে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইনের কাছে সংশ্লিষ্ট মামলার নথি ও ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যাসহ সংশ্লিষ্ট মামলার নথি চাওয়া হয়। তিনি সেটা রোববার অনলাইনে পাঠিয়েছেন। সোমবার বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে মূল নথি পাঠাবেন।”  

দুই পৃষ্ঠার ব্যাখ্যায় বিচারক মোহাম্মদ আলী হোসাইন বলেছেন, “শুনানি চলাকালে উৎসুক জনসাধারণের রোষানল হতে ইউএনও সাহেবের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমি শুনানি মুলতবি করি এবং ইউএনও সাহেবের কৌঁসুলির নিবেদন অনুসারে কাগজাত দাখিল করতে বলি এবং আরও মৌখিক আদেশ দিই যে কাগজাত দাখিলের পরে পুনরায় শুনানি হবে।

“আমি তখন ইউএনও সাহেবকে আদালত কক্ষে বসতে বলি। আদালতে কর্তব্য পালনরত পুলিশ সদস্যরা ইউএনও সাহেবের সার্বিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাধ্যমত চেষ্টা করেন। ইউএনও সাহেবকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আদালতের কক্ষে বসানোর জন্য আদালত কক্ষের এক দরজা দিয়ে বের হয়ে বারান্দা ব্যবহার করে অন্য দরজা দিয়ে আদালত কক্ষে আনতে হয়েছে। এই সময়ে মিডিয়ার কর্মীরা বা অন্য কেউ কোনো ছবি তুলেছেন কি না,তা অবলোকন করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই সময়ে কী সংবাদ প্রচার করা হয়েছে, তা আমি বিচারকার্য পরিচালনাধীন থাকায় জানতে পারিনি।

“অতঃপর ইউএনও সাহেবের পক্ষে কাগজাত হলে এবং উত্তেজনার পরিস্থিতির অবসান হলে জামিনের দরখাস্ত এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫ ধারার দরখাস্ত আইনানুগ প্রক্রিয়া পালনপূর্বক মঞ্জুর ক্রমে সসম্মানে জামিন প্রদান করা হয়।”

প্রথমে শুনানির পর জামিন মঞ্জুরের আদেশ না দেওয়ার পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়ে আলী হোসাইন বলেন, ইউএনওর আদালত কক্ষ ত্যাগের পর তার নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তিনি তা করেছিলেন।

ওই মামলার শুনানিকালে আদালতকক্ষের পরিবেশ তুলে ধরে বিচারক বলেন, ফরিয়াদি বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়দুল্লাহ সাজু নিজে এবং তার পক্ষে বর্তমান সাংসদ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনজীবী তালুকদার মো. ইউনুছ, সাবেক সাংসদ আইনজীবী আবদুর রশিদ, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল কাদের, আইনজীবী আনিছ উদ্দিন আহম্মদ শহীদসহ প্রায় ৫০ থেকে ৭০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। অপরপক্ষে ইউএনওর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোখলেছুর রহমান।

“শুনানি চলাকালে আদালত কক্ষ যেমন আইনজীবীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ ছিল, তেমনিভাবে আদালতের বারান্দা এবং সংলগ্ন রাস্তায় উৎসুক জনসাধারণসহ মিডিয়া কর্মীদের উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ছিল।”

আদালত প্রাঙ্গনে ইউএনও তারিককে পুলিশ ধরে নেওয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে বিবৃতি দেয় সরকারি কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

তারিক সালমানকে গ্রেপ্তারের ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছবিতে বিকৃত করার মতো কিছু তারা দেখেননি বরং এটি একটি ‘সুন্দর কাজ’, রীতিমত ‘পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য’।

এরপর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মামলার বাদী ওবায়দুল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানোর কথা জানানো হয়। ওই দিন আদালতে দায়িত্ব পালনকারী ছয় পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রোববার সকালে মামলা তুলে নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ সাজু।